নিজেদের দেওয়া সুপারিশমালা পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করেছেন পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধিরা। গতকাল শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে এই সভা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এরই মধ্যে যেসব কমিশন প্রতিবেদন জমা পড়েছে, সেসব কমিশনের সুপারিশমালা পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের জন্য কমিশন প্রধানদের মধ্যে এই মতবিনিময় সভা হয়। সভায় কমিশনগুলোর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। খবর বিডিনিউজের
সভায় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধানের পক্ষে বিচারপতি এমদাদুল হক অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি কমিশন প্রধানরা মতবিনিময় সভা করেন। সেদিনও তারা নিজেদের দেওয়া সুপারিশমালার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। কোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করার সিদ্ধান্তও হয় সেখানে।
রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে যে ১১টি কমিশন গঠন করেছে সরকার, সেগুলোর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় গত ১৫ জানুয়ারি।
প্রথম দফায় গঠন করা ছয়টি কমিশনের মধ্যে এই চারটিও ছিল। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩১ জানুয়ারি। এই দুই কমিশন এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
‘রাষ্ট্র মেরামতের রোডম্যাপ’ তৈরির কাজে এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে গত সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে সংস্কারের চেয়ে দ্রæত নির্বাচন আয়োজনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন সব কিছু আমূল পাল্টে দেওয়া এসব সংস্কার কার্যক্রম কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলছেন, প্রয়োজনীয় ও আবশ্যকীয় কিছু সংস্কার তিনি নির্বাচন আয়োজনের আগে শেষ করতে চান। যেগুলো থেকে যাবে, সেগুলো ভবিষ্যতের জন্য জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে রেখে যেতে চান তিনি। চলতি বছরের শেষ দিকে কিংবা আগামি বছরের প্রথমার্ধে নির্বাচন হওয়ার আভাসও বিভিন্ন সময় দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস বলেন, ‘দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ছোট পরিসরে না কি দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার চায়। নির্বাচন সে অনুযায়ীই দেওয়া হবে’।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না’।
নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয় ৩ অক্টোবর। এই পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার কথা ছিল।
আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয় ৬ অক্টোবর। এই কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল ৫ জানুয়ারির মধ্যে।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদন দিতে সেগুলো ১৭ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে।