নিকট অতিতে সচিবালয়ে আগুন, সম্প্রতি শাহজালাল বিমান বন্দরে আগুন, চট্টগ্রামের ইপিজেটে আগুনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিকান্ডের কারণে দেশের প্রচুর অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হয়েছে। কিন্তু দেশে যেসকল ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার কোন যুক্তিসংগত সুরাহা সরকার করতে পারেনি। দেশের সকল অগ্নিকান্ড দুর্ঘটনা নয়, অনেক ক্ষেত্রে তা নাশকতা কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অন্তর্র্বতী সরকারকে বিব্রত করতে এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দেশ বিরোধী একটি মহল বর্তমান সরকারের ক্ষমতা লাভের পর হতে নানাভাবে নাশকতার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবতাও লক্ষ করার মতো। আন্তরিকতা , নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি , গোষ্ঠীর এবং মহল বিশেষের অবহেলাও জনগণের চোখ এড়াচ্ছে না।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়-রেলের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্টেশনসমূহে যেকোন নাশকতা ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয় – দেশব্যাপী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় সংঘটিত অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও রেল স্টেশনের নিরাপত্তা জোরদার করেছে রেলওয়ে। গত ২০ অক্টোবর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের এক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রতিটি স্থাপনায় এমন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি স্থাপনায় রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রেন চালক, কর্তব্যরত গার্ড ও প্রকৌশল বিভাগের লোকজনকেও রেললাইনের আশেপাশে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে পূর্বাঞ্চলের কেপিআইভুক্ত স্থাপনা ও রেল স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি বিভাগে দায়িত্বশীলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে’।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের পক্ষ থেকে আটটি নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পত্র পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, রেলওয়ে স্টেশন, যাত্রীবাহী ট্রেন, মালবাহী ট্রেন, তৈলবাহী ট্রেন, কারখানা, ডিপো ও লোকোসেডসহ বিভিন্ন কেপিআইভুক্ত স্থাপনাসমূহে সন্দেহজনক ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মীগণকে অবহিত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রেলওয়ে কন্ট্রোল, ইয়ার্ড, বুকিং পার্সেল রাখার স্থাপনা, ওয়াশপিট, ফুয়েলিং, পয়েন্ট, ফুয়েল স্টোরেজ, ট্যাংক, রিলিফ ট্রেন এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা, সন্দেহজনক কোনো বস্তু বা প্যাকেট নজরে আসামাত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ট্রেন চালক, কর্তব্যরত গার্ড ও প্রকৌশল বিভাগের লোকজন রেললাইনের আশেপাশে কোনো নাশকতামূলক তৎপরতা নজরে আসলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কন্ট্রোলকে অবহিত করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীগণ রেলওয়ে ট্র্যাক ও ব্রীজসমূহে নিয়মিত পেট্রোলিং ব্যবস্থা জোরদার করবে। এছাড়াও ইলেকট্রিক বিভাগের কর্মচারীগণ পাওয়ার হাউজ ও ট্রেনের পাওয়ার কার এবং ইলেকট্রিক বিভাগের অধীনস্থ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যাত্রীবাহী ট্রেনের অভ্যন্তরে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্টেশন প্লাটফর্ম ও ইয়ার্ডসমূহে অপরিচিত ব্যক্তি ভবঘুরে, হকারের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ট্রেন, স্টেশন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সচল ও কার্যকর রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাতে জানতে পারি রেলের কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরপরেও স্টেশন ঘিরে নাশকতার ভয় রয়েছে। স্টেশনের পুরো এলাকার অনেক অংশ এখনো খোলা আছে। সরাসরি স্টেশনের সম্মুখ অংশ দিয়ে বহিরাগত লোক প্রবেশ করতে না পারলেও অন্যান্য এলাকা দিয়ে বহিরাগত প্রবেশ হয়।
সর্বশেষ রেলওয়ে অপারেশন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর রাজনৈতিক হরতাল-অবরোধে রেলপথে ব্যাপক অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার ঘটনা ঘটে। ৪টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ ৬টি যাত্রীবাহী ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে তিনটি ইঞ্জিনসহ ১৩টি কোচ পুড়ে যায়। সহিংসতায় পোড়া ইঞ্জিন ও কোচগুলো অকেজোঁ হয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এধরনের ক্ষতি এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যাগ প্রশংসনীয়। শুধু রেল কর্তৃপক্ষ নয় , সকল সরকারি-বেসরকারী স্থাপনা কর্তৃপক্ষসমূহকেও অতিরিক্ত নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়া জরুরি। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সরকার ও দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে আসন্ন নির্বাচনের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সজাগ থাকতে হবে এমন অভিমত দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকের। দেশটা সকলের, সুতরাং সরকার এবং বেসরকারি স্থাপনা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সমগ্র দেশবাসীকে যেকোন নাশকতা ঠেকানোর ব্যাপারে সদা সজাগ থাকতে হবে।











