‘নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতংকে সময় অতিবাহিত করছে’

1

দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স¤প্রতি এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই এর ভয়াবহ শিকার হচ্ছেন কন্যাশিশুসহ সকল বয়সী নারী। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতংকে সময় অতিবাহিত করছে। এ পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য। নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাওয়া, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি কারণে সামাজিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে যা সমতাভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার অন্তরায়। নারীর প্রতি এ ধরনের আচরণ দূর করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, যাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন অসম্ভব। নারী ও শিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য ও অধিকার হরণ বিলোপ সাধনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। অভূতপূর্ব রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সূচিত বৈষম্যবিরোধী ‘নতুন বাংলাদেশে’ এ অঙ্গীকারের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের নিশ্চিয়তা প্রদানে বাংলাদেশ জাতীয় পরিমÐলে সংবিধানের আলোকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও), নারী উন্নয়ন নীতিমালা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রভৃতি অন্যতম। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, নারী বা শিশুদের অনুক‚লে বিশেষ বিধান প্রণয়নে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করা যাবে না। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৫ এ নারীদের সম-অধিকার এবং তাদের ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নারী-পুরুষের সমতার আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ২০২৪ এ ৪০ ধাপ অবনমন হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক প্রবণতা ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যা পুঁজি করে নারী ও কন্যাশিশুর বহুমাত্রিক অধিকার হরণ। শিক্ষাঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে চলমান এ প্রবনতা চরম উৎকণ্ঠাজনক। গতকাল সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানায় সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রাম এর নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে সনাক-টিআইবি’র অবস্থানপত্র পাঠ করেন টিআইবি’র ইয়েস দলনেতা মো. মিরাজুল ইসলাম ও ইন্টার্ন সুমাইয়া সুলতানা। এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সনাক সদস্য এস এম ফরহাদ উল্লাহ, কলামিস্ট মুহাম্মদ মুসা খান, সঞ্জয় বিশ্বাস, রওশন আরা চৌধুরী ও জেসমিন সুলতানা পারু এবং টিআইবি’র ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মো. জসিম উদ্দিন, মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সনাক-টিআইবি চট্টগ্রাম এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ৪৫টি সনাক অঞ্চলে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সনাক ও ঢাকাভিত্তিক ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস), অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রæপ (এসিজি) এর সদস্যরা সর্বদা সোচ্চার। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়নে সনাক, ইয়েস, এসিজি ও টিআইবি কিছু দাবি উত্থাপন করেছে।
টিআইবি’র সদস্য, টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, টিআইবি কর্মী ও নানা শ্রেণী পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি