নাম জটিলতায় মদুনাঘাট প্রকল্প!

98

এবার নাম জটিলতায় পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট প্রকল্প। দুইমাস আগ থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি থেকে পানি সরবরাহ করা হলেও এখনও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা যাচ্ছে না প্রকল্পটির। নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব আটকে থাকার কারণে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও আটকে আছে প্রকল্পটির। যদিও প্রকল্পটি থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে নগরীতে।
মদুনাঘাট প্রকল্পের নাম পরিবর্তন নিয়ে ওয়াসার বোর্ড সভায় প্রস্তাব তোলা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪৮তম বোর্ড সভায় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদিতও হয়। দৈনিক প্রায় ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এ প্রকল্পের নামকরণ বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে করার প্রস্তাব করে বোর্ড সদস্যরা। পরবর্তিতে নাম প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে সিটি মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়। নাম প্রস্তাবে অনুমতির বিষয় থাকায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ও অবহিত করা হয়। আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে জানানো হয় মন্ত্রণালয়েও। এরই মধ্যে প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোন পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সাড়া আসেনি। ইতিমধ্যে গেল বছরের নভেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে চলে যায় প্রকল্পটি। প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা থাকলেও ইতিমধ্যে পুরোদমে উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করেছে প্রকল্পটি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল মিললে চলতি মাসেই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে। এর আগে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব গৃহীত না হলে মদুনাঘাট প্রকল্প হিসেবেই দেখা হবে প্রকল্পটিকে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য আমরা চিঠি লিখেছি। নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন হয়তো আমাদের একটা শিডিউল দিবেন। আশা করছি, আমরা এ মাসেই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে পারব।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের নাম নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবে প্রকল্পের নাম কী হবে। যদি মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করতে রাজি হয়, তাহলে হবে না হয় মদুনাঘাট প্রকল্পই থাকবে।
গত নভেম্বরের প্রথম দিনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় মদুনাঘাট প্রকল্প। প্রথম দিনেই ত্রæটির কারণে কুয়াইশ এলাকায় পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। ওই এলাকার দুটি পাইপলাইনের মাঝে জোড়া না লাগানোর কারণে প্রথম দিনেই এমন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইন ও সংযোগ লাইনে ত্রুটিসহ আরও নানা ত্রুটির মুখোমুখি হতে হয়। বেশ কয়েকটি এলাকায় পাইপ লাইন ফেটে রাস্তাসহ পুরো এলাকায় পানি উঠে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ইতিমধ্যে এসব ত্রুটি সারানোর কাজ শেষ করেছেন। উদ্বোধনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা আছে প্রকল্পটির।
প্রকল্পের উপ-পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ১ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করেছি। প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো আমরা সমাধান করেছি। এখন প্রকল্পটি পুরোপুরি প্রস্তুত। পুরো ক্ষমতায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিবে কখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তবে নগরবাসী প্রকল্পের পানি পাচ্ছেন।
চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড সেনিটেশন প্রজেক্ট এর অধীনে মদুনাঘাট প্রকল্পের কাজে হাত দেয় ওয়াসা। হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে নগরীতে দিনে ৯ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ১৮৯০ কোটি টাকার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। তবে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ৯০ লাখ, বাংলাদেশ সরকার ৩৭০ কোটি ৩৭ লাখ ও চট্টগ্রাম ওয়াসা ২২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের হাটহাজারীর মদুনাঘাট এলাকায়। মদুনাঘাট থেকে আসা পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে নগরীর কালুরঘাট বুস্টার স্টেশনে আসার পর সেখান থেকে মূল পাইপ লাইনের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হবে এই পানি। প্রকল্পের অধীনে ১৩৫ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনের পর পরিশোধন করে নগরীতে সরবরাহ করা। বিশেষ করে নগরীর উত্তর-পূর্ব অংশ বৃহত্তর বাকলিয়া, মোহরা, চান্দগাঁও, কালামিয়া বাজার, কল্পলোক আবাসিক, রাহাত্তারপুল, খাতুনগঞ্জ, খাজা রোড, ডিসি রোড, সিরাজ উদ দৌলা সড়কের পূর্ব অংশ এবং পতেঙ্গা এলাকায় পানি সরবরাহ করা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, নাম পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কিছু সংস্থার অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। প্রকল্পটি অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু হলেও নাম পরিবর্তনের বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা যাবে না। এরমধ্যে অবশ্য নাম পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।