নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক নির্মাণে নীতিগত সিদ্ধান্ত

1

এম.কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার পর নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ কাজ খুব শিগগরই চালু করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। খুব শিগগরই চালু করা হবে লংগদু-নানিয়ারচর সড়কের কাজ। ৪ মে সকাল ১০টায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে এক পর্যালোচনায় সভায় সড়কটি নির্মাণে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রাজধানীর আব্দুল গনি রোডে অবস্থিত বিদ্যুৎ ভবনের ডিপিডিসি সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সজল কান্তি বণিক, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড লেঃ কর্নেল খালেদ, লেঃ কর্নেল আসিফ এবং পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য মিনহাজ মুরশীদ।
সভা শেষে পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য মিনহাজ মুরশীদ গণমাধ্যমকে জানান, সভাটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। সভায় পর্যালোচনা শেষে রাঙামাটির নানিয়ারচর হয়ে লংগদু-বাঘাইছড়ি উপজেলাকে সংযুক্তকারী সড়কটি নির্মাণের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা বিবেচনায় প্রকল্পটি নির্মাণে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে ডিপিপি তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ডিপিপি তৈরিতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।
মিনহাজ মুরশীদ আরো জানান, ডিপিপি তৈরি হয়ে গেলে সড়কটি নির্মাণে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে। সেটি পেয়ে গেলে রাঙামাটি জেলা সদরের সাথে লংগদু এবং বাঘাইছড়ি উপজেলাবাসীর সড়ক যোগাযোগ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই সম্ভব হবে।
রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন হলেও জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়নি দেশের বৃহত্তম দুই উপজেলা বাঘাইছড়ি ও লংগদু। বাঘাইছড়ি উপজেলা দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা হিসেবে পরিচিত।
অথচ যোগাযোগব্যবস্থার ঘাটতির কারণে পাহাড়ি জনপদের মানুষ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানিয়ারচর-লংগদু আঞ্চলিক সড়কের মাত্র ২৪ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ হলেই রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির পাঁচ উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। খুলে যাবে সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার। কৃষিপণ্য বিপণন ও পর্যটনে তৈরি হবে গুরুত্বপূর্ণ হাব। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তার পাশাপাশি বছরে বাণিজ্য হবে কয়েক হাজার কোটি টাকার।
এ একটি সড়কই পাহাড়ের অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। মূলত ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ নির্মাণ হলে কৃত্রিম হ্রদের কারণে দূরবর্তী বেশ কয়টি উপজেলার মত- নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়িও পানিবন্দি হয়ে জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সেখানে যোগাযোগব্যবস্থায় নৌযান একমাত্র ভরসা হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের পরিবহন ও বাজারজাত করা যেমন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, তেমনি যাতায়াতেও সৃষ্টি হয় নানা ভোগান্তি। তবে ২০২০ সালে নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীতে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের পর পাহাড়ে সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়।
৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু আঞ্চলিক সড়কটির সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশ আগে থেকেই পাকা ছিল। অবশিষ্ট ২৪ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ হলেই জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। এতে রাঙামাটির নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা এই পাঁচ জেলা-উপজেলার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ সড়কটি ব্যবহার করতে পারবে।
এ সড়ক ধরে পাহাড়ি জনপদে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতে খরচ ও সময় সাশ্রয়সহ কৃষি অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে তেমনি মেঘের রাজ্য হিসেবে খ্যাত সাজেকের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। আর সড়ক যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।