পূর্বদেশ ডেস্ক
বাংলাদেশে ছাত্র ও শ্রমিকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ‘নানা ধরনের’ ষড়যন্ত্র নিয়ে সতর্ক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিতাড়িত ‘স্বৈরাচার’ ও তাদের ‘দোসরচক্র’ নানা কৌশলে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপচেষ্টা শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অপশক্তি’ দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে ‘বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি’র মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সবাই যদি আমরা সতর্ক থাকি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিএনপি সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের এই বার্ষিক সাধারণ সভায় তারেক বলেন, বিতাড়িত ‘স্বৈরাচারের’ পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলামান যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই ভেতরে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে পলাতক ‘স্বৈরাচার’ ও তার ‘দোসররা’ যাতে রাজনীতিকে পুনর্বাসিত হতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করাও কিন্তু আমাদের কর্তব্য।
আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিতে হলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান। বলেন, ভোটের অধিকারের সুযোগ পেলে জনগণ তাদেরকে মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে। বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমে পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন।
সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- এই ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলেও মনে করেন তারেক।
তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি কোনো বিরোধ নেই। বিএনপি মনে করে সংস্কার কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন তা এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।
নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্যক্রমের কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে বাক স্বাধীনতা থাকবে
রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপির ২৭ দফা ও ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপনের কথাও তুলে ধরেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।
আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি সেখানে সাগর-রুনির বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই লক্ষ্যে অর্জনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।
আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের ‘শত্রু’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র বা ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নরুল ইসলাম বুলবুলও এ সময় বক্তব্য রাখেন।