নাজিম উদ্দিন চৌধুরী

1

রাজনীতি তার লক্ষ্য পথে পরিচালিত হতে বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে। সেক্ষেত্রে রাজনেতিক দলের আদর্শ ও মূল নেতৃত্বের ভূমিকার পাশাপাশি অন্যান্য নেতাকর্মীর ভূমিকাও কম গুরুড়পূর্ণ নয়। সুবিধাবাদী ও অসৎ নেতাকর্মীর আধিপত্য বেড়ে গেলে অনেক সময় মূল নেতৃত্ব চাইলেও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারে না। ইদানিং, প্রত্যেক দলে আদর্শহীনতা, সুবিধাবাদী ও অসৎ নেতাকর্মীর আধিক্যের কারণে দলের আদর্শের পথে চলা মুশকিল হয়ে পড়েছে তবে এক্ষেত্রে মূল নেতৃত্বের বার্থতাও অনেকাংশে দায়ী। দলে নেতাকর্মীরা আদর্শ ও নৈতিক শক্তির বদলে পেশী ও আর্থিত শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে। নাজিম উদ্দীন চৌধুরী সেই গতানুগতিক চরিত্রের বিপরীতে আদর্শ ও নীতিতে অটল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সদালাপী, বিনয়ী, সৎ চরিত্রবান, সাহসী, নির্ভীক দেশপ্রেমিক ও আদর্শে অবিচল ছিলেন। নেতুত্বের সমস্ত গুণাবলী অর্জন করে তিনি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। নাজিম উদ্দিন চৌধুরী রাজনীতির শুরুতে জাতীয় নেতা মাওলানা ভাসানী, তৎকালীন প্রখ্যাত ছাত্রনেতা কাজী জাফর আহমদ (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ও আবদুল্লাহ আল নোমান (সাবেক মন্ত্রী) কে অনুসরণ করে বাম ঘরানার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৬৮-৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৭১ সালে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের কারণে প্রথম দিকে ভারতে কিছুসংখ্যক বামপন্থী ছাত্রনেতা বিপদে পড়ায় এবং ভারত থেকে তৎকালীন বামপন্থী নেতা কাজী জাফর আহমদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান থেকে কোন সিগন্যাল না আসায় নাজিম উদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে সীমান্তের ওপারে ট্রেনিং নিতে না পারলেও দেশের অভান্তরে থেকে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটির নেতা মোজাম্মেল হকেরা নেতৃত্বে সক্রিয় সংগঠক হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সসহ এম এ পাস করেন। সাহসী ও প্রতিবাদী এই ছাত্রনেতা ছাত্র অবস্থায় ছাত্রদের অধিকার আদায়ে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে।
পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে যোগদান করে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সংগঠিত করার জন্য জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী যুবদল চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি, বিএনপি, রাউজান পৌরসভা ও উপজেলায় সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজনীতির বাইরেও ক্রান্তি, বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তাদের মত নেতাকে স্মরণ ও অনুসরণ করলে নতুন প্রজন্ম আদর্শবান হিসেবে গড়ে উঠবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে, সুবিধাবাদীরা দুর্বল হবে এবং গণতান্ত্রিক শক্তি শক্তিশালী হবে। তিনি ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে ইন্তেকাল করেন। উল্লেখ্য ১৯৫৪ সালে রাউজানের গহিরা মোবারক খিল গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক: কুতুব উদ্দিন খাঁন