নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে ৫১০ সেট ইভিএম

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে থাকা ৫১০টি ইভিএম সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে নির্বাচন কমিশন। ওয়্যারহাউজ না থাকায় এসব ইভিএম সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ছয়টি উপজেলার উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে, উপজেলা অফিসার্স ক্লাব ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের কক্ষে এসব মেশিন যত্রতত্রভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ইভিএমে ভোটগ্রহণ করাকে গুরুত্ব দিলেও শুরু থেকেই এ মেশিনে ভোটগ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর নির্বাচন কমিশনাররাও পদত্যাগ করেছেন। এরপর থেকে ইভিএমগুলো ইসির কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো সরিয়ে ফেলতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য জমি খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সাথেও আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজের একটি খসড়া ডিজাইন প্রকল্প কার্যালয় হতে মাঠ পর্যায়ে দেওয়া প্রয়োজন। ওয়্যারহাউজ তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জমি এবং অন্যান্য খরচের দরকার হবে। এজন্য ইভিএম প্রকল্প এবং মাঠ কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুতপূর্বক কমিশন সচিবালয়ের অনুমোদনের জন্য ইসিতে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় উপস্থিত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, সংরক্ষিত ইভিএমসমূহ যাচাই করে দেখা যায় যে, ইভিএমসমূহের মধ্যে অনেক ইভিএম ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় আছে, এ সকল ইভিএম যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিনষ্ট করা প্রয়োজন। এছাড়া ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ তৈরি করা প্রয়োজন। প্রতিটি ইভিএমের ক্রয়মূল্য দুই লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে চট্টগ্রামে থাকা ৫১০টি মেশিনের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৩০ সেট, পটিয়া উপজেলায় ২০ সেট, চন্দনাইশে ২০ সেট, মিরসরাই উপজেলায় ১৭০ সেট, আনোয়ারা উপজেলায় ১৪০ সেট, ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩০ সেট ইভিএম মেশিন রয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে, উপজেলা অফিসার্স ক্লাব ও বিভিন্ন স্কুল কলেজে ৫১০ সেট ইভিএম ফেলে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামের একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, মেশিনগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। মেশিনগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহার অনুপযোগী। যতটুকু বুঝতেছি এ মেশিন নিয়ে আর ভোটগ্রহণ হবে না। তাই মেশিনগুলো সযতেœ রাখা না গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে একটি অব্যবহৃত কক্ষে মেশিনগুলো রেখেছি। স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় থাকার কারণে এগুলো নষ্ট হচ্ছে। দেশের সকল স্তরে থাকা ইভিএম মেশিনগুলো নির্বাচন কমিশনে নিয়ে এক জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত।
চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ইভিএম সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি কমিশনের সমন্বয় সভাতেও আলোচনা হয়েছে। দ্রæত ইভিএম সংরক্ষণে একটি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানা গেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম নেয়া হয়। প্রায় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব মেশিন কেনা হয়। কিন্তু প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় ইভিএমগুলোর মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হতে শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।