বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম অঞ্চলে এক শ্রেণির দালালচক্র ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাতে নির্ধারিত টাকার বাইরে অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চালকরা বলছেন, নম্বর প্লেটের টাকা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার সময় ব্যাংকে জমা দিয়েছি, তারপরও কেন অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়? এখানকার কতিপয় স্টাফ নম্বর প্লেট লাগাতে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা অবৈধভাবে আদায় করেন। চা-পানি খাওয়ার কথা বলে এসব টাকা নিচ্ছেন তারা।
তারা বলেন, প্রথম দিকে কয়েকজন থেকে নেয়ার পর এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেউ খুশি করে দিলেও নেন, আর না দিলে জোর করে নেন।
তবে নম্বর প্লেট সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বিআরটিএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নম্বর প্লেট এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, আমাদের কোন স্টাফ নম্বর প্লেট লাগানোর জন্য চালকদের কাছ থেকে টাকা চান না। এটা এক শ্রেণির দালালের কাজ। চালকরা সরাসরি আমাদের কাছে না এসে দালালসহ নিয়ে আসেন। আর ওই টাকাটা দালাল আদায় করে নেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট না লাগালে ফিটনেস নবায়ন করা হয় না। যার ফলে বাধ্য হয়ে ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাতে হয়। এই শাখার দায়িত্বে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে। তাছাড়া এ শাখায় ঘুষ লেনদেন করার বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিআরটিএতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজন করতে আসা চট্টগ্রাম থ ১৪-৩৪৯৩ ও চট্টগ্রাম থ ১৩-৭২০৮ নং ট্যাক্সি চালকের সাথে কথা হয়।
তারা জানান, প্রথমে ডিজিটাল নম্বর শাখায় যাই, সেখান থেকে জানানো হয় চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রেশন নেওয়া সিএনজিগুলোতে নাকি সামনের অংশে হলুদ রং লাগাতে হবে। পরে অনেক কথাবার্তার মাধ্যমে ৫০০ টাকা করে অফিস খরচ (ঘুষ) দিয়ে লাগিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএ কম্পাউন্ডে সরেজমিনে গিয়ে এবং কয়েকজন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই শাখায় মিনহাজের নেতৃত্বে ২ থেকে ৩ জন আন-অফিসিয়াল স্টাফ রয়েছে, তাদের সমন্বয়ে এই কাজগুলো হয়ে থাকে। তারা অনেকদিন ধরে বিআরটিএতে থাকার সুবিধার্থে গাড়ির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে অভিজ্ঞ। এখন তারা এইসব দুর্বলতা নিয়ে মালিকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে থাকেন।
আরও অভিযোগ উঠে, বিআরটিএ কার্যালয়ে যদি নম্বর প্লেট চলে আসে তবে গাড়ি নিয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখিয়ে প্লেট লাগাতে হয়। তবে কিছু দালাল হোম ডেলিভারি সিস্টেমের মত সিএনজি ট্যাক্সির গ্যারেজে গিয়ে পরিদর্শন করে নম্বর প্লেট সংযোজন করে আসছেন মোটা অংকের বিনিময়ে। যেটি মোটেও সমুচিত নয়।
বাইক মালিক আবু শাহেদ জানান, এই শাখার কাজ হচ্ছে শুধু ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগানো। কিন্তু তারা ফিটনেস শাখার মোটরযান পরিদর্শকের মতো গাড়িটি পরিদর্শন করে থাকেন এবং কোন গাড়ির (পিকআপ-ট্রাক) চাকার সাইজ বা অতিরিক্ত বডি সংযোজন করা থাকলে সেই গাড়িগুলো থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন। আবার কোন মোটর সাইকেলের মালিক মূল মানি রিসিপ্ট হারিয়ে ফেললে তাকে বিভিন্ন হয়রানি করে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে সেটা লাগিয়ে দেন। তাছাড়াও কোন গাড়ির চ্যাসিস নং সম্পূর্ণ বুঝা না গেলে সেই সকল গাড়ি থেকে ৩-৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ হিসেবে আদায় করেন।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, বিআরটিএ’র বিভিন্ন সার্কেলে ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগানোর সময় যে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের প্রতি আহব্বান জানাই ।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির নম্বর প্লেট এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, কোন চালক গাড়ি নিয়ে আসলে সরাসরি আমাদের কাছে না এসে দালালের শরণাপন্ন হন। তখন তারাই সুযোগ নিয়ে দালালি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। আমাদের কোন স্টাফ এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নন, যদি থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অন্য জায়গায় গিয়ে নম্বর প্লেট সংযোজনের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি এক জায়গায় কয়েকটি গাড়ি থাকে তবে বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের অনুমতিক্রমে যাওয়া যায়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি পুরোপুরি অবগত নই, জেনে পরে জানাতে পারব।