চট্টগ্রামে করোনার নমুনা সংগ্রহে শহরের তুলনায় গ্রাম অনেক পিছিয়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৯২৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা থেকে নমুনা এসেছে মাত্র ১৬০টি। যা মোট নমুনার মাত্র ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশিষ্ট ২ হাজার ৭৬৫টি বা ৯৪ দশমিক ৫২ শতাংশ নমুনাই মহানগরের। শহরের মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসন কাজ করলেও গ্রামের লোকজনকে সচেতন করতে যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৬৫টি। এর মধ্যে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৪৬৩টি বা ৮৯ দশমিক ১৭ শতাংশ মহানগরের নমুনা। উপজেলাগুলো থেকে এ পর্যন্ত নমুনা এসেছে ৩৭ হাজার ৭০২টি। যা মোট নমুনার মাত্র ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। নমুনা কম থাকায় গ্রামে শনাক্ত রোগী সংখ্যায় কম। এ পর্যন্ত উপজেলাগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ২০১ জন। যা চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে উপজেলাগুলোতে নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার প্রায় ১০ শতাংশ।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, নমুনা পরীক্ষা বর্তমানের চেয়ে আরও কয়েকগুণ বাড়ানো দরকার। সরকারের সামর্থ্যরেও একটা ব্যাপার আছে। শহরের মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসন বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে শহরের মানুষ অসুস্থ হলেই নমুনা দিতে আগ্রহী হচ্ছে। নিয়মিত ওষুধ সেবন করছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলেও সচেতনতার অভাবে তারা নমুনা দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তাদের মধ্যে সহনীয় ভাব চলে আসছে। এমনটি চলতে থাকলে উপজেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ আরও দ্রুত বাড়বে। তাই নাগরিকদের সচেতন করতে উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রামের মানুষদের সচেতন করার জন্য সামাজিক ব্যবস্থাকে যুক্ত করতে হবে। মসজিদের মুয়াজ্জিন, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে সচেনতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। এতে করেই গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসতে পারে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিআইটিআইডিতে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭৬২টি। এর মধ্যে উপজোলার নমুনা মাত্র ৬০টি। বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ও ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, শুধু গ্রাম নয়, শহর থেকেও পর্যাপ্ত নমুনা আসছে না। সংক্রমণ ঠেকাতে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা করা দরকার। নমুনা পরীক্ষা কম হলে নিজের অজান্তেই একজন করোনা আক্রান্ত মানুষ অনেককে সংক্রমিত করতে পারে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের বরাত দিয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান পূর্বদেশকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ বাড়ানোর বিষয়টি আসলে সে রকম নয়। অসুস্থ মানুষ নমুনা দিতে আগ্রহী হয়ে এলেই তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মানুষ আগ্রহী না হলে তো ঘরে ঘরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা যায় না। তবে উপজেলার নাগরিকদের সচেতন করতে আমরা খুব শীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করব।