দেশের তিন বেসরকারি এয়ারলাইন্সের অন্যতম নভোএয়ার তাদের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকদিন ধরে উড়োজাহাজ সংস্থাটি বন্ধের যে গুঞ্জন চলছিল অবশেষে তা সত্যি হল। গতকাল শুক্রবার রাতে নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেসবাউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘আজ থেকে নভোএয়ারের ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে’।
নভোএয়ারের আরেকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের এয়ারক্রাফটগুলো বিক্রির চেষ্টা চলছিল। একটা পার্টি ইন্সপেকশনে আসবে। তাই ফ্লাইট পরিচালনা আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। পরে হয়ত চালু হতেও পারে’।
অনেকদিন থেকেই ধুঁকতে থাকা নভোএয়ার বন্ধের গুঞ্জন বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। সবশেষ গেল ১৯ এপ্রিল হঠাৎ নতুন করে টিকেট বুকিং না নেওয়ায় এই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে। পরে অবশ্য আবারও ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু, এবার বন্ধই হয়ে গেল। খবর বিডিনিউজের
নভোএয়ারের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার গুঞ্জন প্রায় বছর দুয়েক ধরেই শোনা যাচ্ছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের কাছে দু’টি এটিআর ৭২-৫০০ মডেলের এয়ারক্রাফট বিক্রি করে দেয় নভোএয়ার। ১ ফেব্রুয়ারি এয়ারক্রাফট দু’টি বুঝে নেয় ইয়েতি এয়ারলাইন্স। সে সময় বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নভোএয়ারের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, লম্বা রুটের জন্য এয়ারক্রাফট কিনতেই স্বল্প দূরত্বে ওড়ার উপযোগী এটিআরের এয়ারক্রাফটগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।
সেই দু’টি এয়ারক্রাফট বিক্রির পর পাঁচটি এয়ারক্রাফট আছে এখন বেসরকারি এই উড়োজাহাজ সংস্থার বহরে।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছিল নভোএয়ার। এরপর এক যুগ ধরে এক লাখের বেশি ফ্লাইট চালিয়ে সাড়ে ৭০ লাখের বেশি যাত্রীকে সেবা দিয়েছে তারা।
দেশের ‘প্রথম’ এয়ারলাইন্স হিসেবে নভোএয়ার যাত্রীদের জন্য চালু করেছিল ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রাম- স্মাইলস, কো-ব্র্যান্ডেড কার্ড, টিকিট কেনার জন্য মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েব চেক-ইন সুবিধা।
ভ্রমণ বিষয়ক পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘দ্য বাংলাদেশ মনিটর’ এর বিচারে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে ‘বেস্ট ডমেস্টিক এয়ারলাইন্স’, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ‘বেস্ট অনটাইম পারফরমেন্স এয়ারলাইন্স’ এর পুরস্কার পায় নভোএয়ার। সবশেষ ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহীতে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছিল নভোএয়ার।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-কলকাতা রুটে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করে নভোএয়ার। ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময়ে এই রুটে কিছুদিন ফ্লাইট বন্ধ রেখেছিল তারা।
পরে ফের চালু হলেও ২০২৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে আবারও এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা ‘সাময়িকভাবে’ স্থগিত করে এই উড়োজাহাজ সংস্থা। এখনও সেটি বন্ধই রয়েছে।
বাংলাদেশে এরইমধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। এবার সেই তালিকায় নভোএয়ারও যুক্ত হল।