পূর্বাঞ্চলে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৬টি রেলস্টেশন সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব স্টেশনকে নবরূপে সাজানো হবে। চলমান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (১৬ ডিসেম্বর) উপলক্ষে নতুন করে সাজানো স্টেশনগুলো উদ্বোধন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি স্টেশনকে আদর্শ রেলস্টেশনে পরিণত করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্টেশনের নিচু প্লাটফর্ম উঁচুকরণ, শেড বর্ধিতকরণ, নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি, টয়লেট নির্মাণসহ সংস্কার কাজে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রেল যোগাযোগের পাশাপাশি যাত্রী সেবার মান বাড়াতে কিছু রেলস্টেশন সংস্কার ও আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব স্টেশনের পরিবেশ হবে সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। পরিকল্পনায় নেয়া ২৬ স্টেশনে কোনটিতে কত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা আরো কিছুদিন পর জানা যাবে। এই স্টেশনগুলোতে হরেক রকম উন্নয়ন কাজ করা হবে। তবে স্টেশনে যাতে শুধুমাত্র টিকিট সংগ্রহকারী ছাড়া বহিরাগত কেউ ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলে ১০৭টি রেলস্টেশন আছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকায় ১৯টি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী এবং চট্টগ্রামের ১২টি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী রেলস্টেশন বন্ধ আছে। চালু থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে এমন ২৬টি রেলস্টেশন আধুনিক করা হবে। নবরূপে সাজানোর পরিকল্পনায় থাকা স্টেশনগুলো হলো- নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা-কমলাপুর, ভৈরব বাজার, সরিষাবাড়ি, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিরা, ফেনী, লাকসাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, জামালপুর, ইসলামপুর, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ভালুগঞ্জ, নোয়াপাড়া, আজমপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল। এই স্টেশনগুলোর স্টেশন ভবন সংস্কার, নতুন ভবন নির্মাণ, রি-মডেলিং, নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ, প্লাটফর্ম শেড নির্মাণ, টয়লেট স্থাপন, বেস্ট ফিডিং, র্যাম্প সংস্কার, নিচু প্লাটফর্ম উঁচুকরণ, বেঞ্চ স্থাপন, ফেন্সিং কাজ করা হবে।
পকিল্পনায় থাকায় স্টেশনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ভবনটি সংস্কার করা হবে। সেখানে স্থাপন করা হবে নতুন টয়লেট। শিশুদের দুগ্ধপানের সুবিধার্থে স্টেশনে নির্মাণ করা হবে বেস্ট ফিডিং সেন্টার। র্যাম্প মেরামত ও পুনঃসংস্কার কাজ করা হবে। এছাড়াও নিচু প্লাটফর্ম উঁচুকরণ, ফেন্সিং কাজ, এক্সেস কন্ট্রোল কাজ, স্টেশনের ৬ ও ৭নং প্লাটফর্ম সেড বর্ধিতকরণ করা হবে। একইসাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশনের প্লাটফর্ম উঁচু করণ, বেঞ্চ স্থাপন করা হবে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, রেল স্টেশনের অধিকাংশ প্লাটফর্ম নিচু। ট্রেন থামলে প্লাটফর্ম থেকে কোচে উঠতে যাত্রীদের বেগ পেতে হয়। উঁচু-নিচু প্লাটফর্ম থেকে কোচে উঠকে গিয়ে অনেক সময় যাত্রীদের দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। এসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে স্টেশনগুলো আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন পূর্বদেশকে বলেন, ‘২৬ রেল স্টেশনের নতুন করে সাজানোর দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান আছে। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে কিছু স্টেশনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বরে আগে সব স্টেশনের কাজ শেষ হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নবরূপে সাজানো স্টেশনগুলো উদ্বোধন করা হবে।’