নদভী-বিপ্লবসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারাগারে আটক সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী এবং আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে নদভীর শ্যালক, পুলিশের দুই পরিদর্শক এবং স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক রয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কমিশনের নির্দেশ পাওয়ার পর গত রবিবার সংস্থাটির চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। অনুসন্ধান কমিটিতে সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেনকে প্রধান এবং সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম ও উপসহকারী পরিচালক আপেল মাহমুদ বিপ্লবকে সদস্য করা হয়েছে।দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মো. সুবেল আহমেদ বলেন, সাবেক এমপি নদভীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আনা অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন নুরুল্লাহ চৌধুরী, কাজল কান্তি শীল ও তার স্ত্রী শীপ্রা রাণী শীল, আবু নছর মুহাম্মদ হাছান, নুরুল হক, এইচ এম গণি সম্রাট, এসএম আবদুল জাব্বার ও তার স্ত্রী জেসমিন আকতার, ডা. আরমান বাবু রুমেল ও তার স্ত্রী কহিনুর আকতার, আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিজান, মোহাম্মদ সেলিম (রানী সেলিম), জহির উদ্দিন, মুজিবুর রহমান দুলু, জহিরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ছরওয়ার, ফৌজুল কবির এবং সাবেক ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোহাম্মদ রাশেদ।
দুদক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। দলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে তারা শুধু ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় গড়েননি, বরং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের বরাদ্দও আত্মসাৎ করেছেন। অভিযুক্তরা বিশেষ করে টিআর ও কাবিখা তহবিল তছরুপের সঙ্গে জড়িত। গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ও অর্থ আত্মসাৎ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ এবং ঠিকাদারি কাজেও তাদের সরাসরি প্রভাব ছিল। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ নিজেদের ঘনিষ্ঠদের দিয়ে করিয়ে কমিশন বাণিজ্য করেছেন তারা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবেক এমপি নদভী এবং বিপ্লব বড়ুয়া দলের শীর্ষ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেন। এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তারা থানার কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিপক্ষদের হয়রানি করেছেন, নিজেরা ফায়দা নিয়েছেন এবং রাজনৈতিক মাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। লোহাগাড়া থানার সাবেক দুই ওসি এই চক্রের হয়ে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অভিযুক্তদের অনেকেরই আয়কর নথি অনুযায়ী আয় ও সম্পদের মধ্যে বিস্তর গরমিল রয়েছে। হঠাৎ করেই তাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে জমি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এদের কেউ কেউ আবার বিদেশে অর্থপাচারেও জড়িত রয়েছেন।