নতুন শুল্ক প্রস্তাব স্থগিতের অনুরোধ

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপ করা সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে গতকাল সোমবার পাঠানো ওই চিঠিতে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ করেছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
প্রধান উপদেষ্টা চিঠিতে বলেন, চলমান পরিকল্পিত কাজগুলো আমরা পরবর্তী প্রান্তিকের মধ্যে শেষ করব। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সূচারুভাবে শেষ করতে দয়া করে প্রয়োজনীয় সময় আমাদের দিন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনের আয়োজন ও কর্মসূচি নিয়ে সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক প্রেস ব্রিফিং প্রধান উপদষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও চিঠির বিষয়টি জানান।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে যা যা করা দরকার বাংলাদেশ তা করবে। এর অংশ হিসেবে মার্কিন কৃষি পণ্য আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক কমানো এবং অশুল্ক বাধা অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের মুখোমুখি হবে। এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হল মোট ৫২ শতাংশ।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাকের পারিমাণ ৭৩৪ কোটি ডলার।
নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সরকারের উপদেষ্টা, বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে রোববার অর্থমন্ত্রণালয়ে আরেকটি জরুরি সভা হয়।
ওই বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সঙ্গে ইউএসের কন্টিনিউয়াস যোগাযোগ হচ্ছে। ঢাকায় তাদের দূতাবাস ও সেখানে ইউএসটিআর এর অফিসিয়ালসদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটা চিঠি যাবে।
স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হবে। আরেকটি চিঠি বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অফ ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ-ইউএসটিআর কার্যালয়ে।
তিনি বলেন, আমরা কী কী অ্যাকশন প্লানে যাচ্ছি, কী কী ল্যাঙ্গুয়েজ থাকবে সেটা ঠিক করা হচ্ছে। ব্যবসাবান্ধব পদক্ষেপই আমরা নেব। বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়েও ব্যবসা বান্ধব হবে এই পদক্ষেপ।
এরপর গতকাল ডনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠানো চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি এই চিঠির মাধ্যমে আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডা পূর্ণ সমর্থনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।
আপনার শপথ গ্রহণের পরপরই আমি আমার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠাই এ ইঙ্গিত দেওয়ার জন্য যে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দ্রুত বর্ধনশীল বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। আমরাই প্রথম এমন সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।
ইউনূস বলেন, আমরাই প্রথম যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহুবছর মেয়াদি চুক্তিতে সই করেছি এবং এলএনজি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর আমরা আরও সহযোগিতার ক্ষেত্র খুঁজছি। সেই সময় থেকেই আমাদের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে বাংলাদেশে আমেরিকান রপ্তানি দ্রæত বৃদ্ধি পায়। আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে আমাদের পদক্ষেপের বিস্তারিত নিয়ে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, আমাদের পদক্ষেপের একটি মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা, যা আমেরিকান কৃষকদের আয় ও জীবিকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। মার্কিন তুলা যাতে দ্রæত বাজারে পৌঁছাতে পারে, সেজন্য আমরা বাংলাদেশে ডিউটি-ফ্রি সুবিধাসহ একটি নির্ধারিত ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং’ সুবিধা চ‚ড়ান্ত করছি। জেনে খুশি হবেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় অধিকাংশ মার্কিন রপ্তানি পণ্যের ওপর সর্বনি¤œ শুল্ক আরোপ করা হয় বাংলাদেশে।
আমরা স্ক্র্যাপ মেটালসহ উপরোক্ত কৃষিপণ্যের ওপর শূন্য শুল্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করছি। এ ছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতিসহ শীর্ষ আমেরিকান রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ কমানোর ব্যাপারে কাজ করছি।
মার্কিন পণ্যের রপ্তানিতে বিভিন্ন অশুল্ক বাধা অপসারণের উদ্যোগর কথা তুলে ধরে চিটিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা বা যাচাইবাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা বাতিল, প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সার্টিফিকেশনের নিয়ম সহজ করা এবং শুল্ক প্রক্রিয়া ও মান যাচাই সহজ করাসহ অন্যান্য বাণিজ্য সহায়ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল ও প্রতিরক্ষা খাতসহ উন্নত প্রযুক্তি খাতে মার্কিন ব্যবসার নতুন যুগের সূচনা করেছে।
চিঠির শেষে বাংলাদেশের ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিতে ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় ৬০টি দেশের ওপর সুনির্দিষ্ট ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বসিয়েছেন। এই দেশগুলো মার্কিন পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে থাকে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য।