নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা দিলেন অলি

36

জামায়াতে ইসলামীর একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও দলটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদের কাছে। এলডিপি সভাপতি স্পষ্ট করেছেন, তার নেতৃত্বে যে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ হয়েছে, তাতে জামায়াতকে রাখতেও আপত্তি নেই তার। মুক্তিযোদ্ধা অলি বিএনপিতে থাকার সময় জামায়াতবিরোধী নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। চট্টগ্রামে তার নির্বাচনী এলাকায়ও জামায়াতের সঙ্গে ছিল তার দ্ব›দ্ব।
দেড় দশক আগে বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করলেও পরে তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে যোগ দেন, ওই জোটে জামায়াতও রয়েছে। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর সংসদে যোগ দেওয়া নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তার মতানৈক্য দেখা দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন অলি, যাতে ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টি, জাগপা, খেলাফত মজলিস ও ন্যাশনাল মুভমেন্ট যোগ দেয়। এই মঞ্চে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান অলি জানালে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, জামায়াতকে তিনি নেবেন কি না?
জবাবে অলি বলেন, ‘দেশ প্রেমিক শক্তি যারাই আসতে চায়, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তাদের সবাইকে আমরা সাথে নেব। কোনো জাতিকে বিভক্ত করে দুর্বল লোকেরা। অন্যের কাঁধের উপর বন্দুক রেখে বন্দুক চালানো ঠিক না, সবসময় অন্যকে দোষ দিয়ে আমি এগুব, এটা ঠিক না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে’।
প্রশ্নকারী সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে অলি বলেন, ‘আপনি হাসতেছেন, বোধহয় একটু আরাম পাচ্ছেন। আমার কথাটা শোনেন। ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক না। এরা বাংলাদেশকে ভালোবাসে’।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় নামা জামায়াত পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে বাঙালি হত্যায়ও নেমেছিল। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দলটির শীর্ষনেতাদের সবারই শাস্তি হয়েছে। সম্প্রতি জামায়াতের একটি অংশ একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা জানায়।
সেদিকে ইঙ্গিত করে অলি বলেন, ‘এরা হলো বাংলাদেশের জামায়াত, এই দেশকে তারা ভালোবাসে। তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী আসছে এবং তারা নিজেদের মধ্যেও বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারা দেশপ্রেমিক শক্তি’।
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাকেও মঞ্চের লক্ষ্য ঠিক করেছেন এলডিপি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে এবং বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, দেশবাসীকে মুক্ত করতে চায়, যারাই আমাদের সাথে আসবে, সবাইকে আমরা সাথে রাখব’।। ‘কিন্তু দালাল-বেঈমানদের না’- এই মন্তব্য করলেও তিনি কাদের এভাবে চিহ্নিত করেছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
তবে সম্প্রতি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে অলি বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পরও যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন, তারা ‘বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
জোট নেতা অলি আহমদ এবং দলীয় অনেক নেতার বিরোধিতার মধ্যেও বিএনপি একাদশ সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামও সংসদে যোগ দিয়েছে। আপনারা ২০ দলীয় জোটে থাকবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে অলি বলেন, ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ কোনো জোট নয়। আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি এবং থাকব’। এই প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি, বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের মূল দল বিএনপি। তারা তো ওই জোটে থেকেই ড. কামাল হোসেন সাথে (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) কাজ করছেন’। খবর বিডিনিউজের
খালেদাকে মুক্ত করার আন্দোলনে বিএনপি নেতারা ব্যর্থ হচ্ছেন বলে দাবি করে আসছিলেন দলটির এক সময়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য অলি। বিএনপির ব্যর্থতার কারণের কি এই মঞ্চ গঠন করা হলো- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কারও ব্যর্থতার কথা বলব না। আমাদের সকলের ব্যর্থতা, আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদেরও ব্যর্থতা রয়েছে। যথেষ্ট হয়েছে। উই আর টু ফ্রি দ্য নেশন। জাতিকে মুক্ত করতে হবে, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারে কে আসল কে গেল- এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা চাই, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক’।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে অলির সঙ্গে ছিলেন কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সভানেত্রী তাসমিয়া প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের একাংশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাশেমী, ন্যাশনাল মুভমেন্টের সভাপতি মুহিব খান, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম।