চাক্তাই নতুন ব্রিজ এলাকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে চাক্তাই-কালুরঘাট সংযোগ সড়ক। এমনিতেই শাহ আমানত সেতু এলাকায় সবসময় যানজট লেগে থাকে। তার সাথে আর একটি সংযোগ সড়ক যুক্ত হলে যানজট বাড়বে বৈ কমবে না। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন বলছে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সিডিএ’র নির্মাণাধীন চাক্তাই-কালুরঘাট সংযোগ সড়কটি শাহ আমানত সেতুর (নতুন ব্রিজ) গোলচত্বরের সাথে যুক্ত হবে। এতে গোলচত্বর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানগামী হাজার হাজার গাড়ির চাপে প্রতিদিনই শাহ আমানত সেতু গোলচত্বর এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সে যানজট সামলাতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গলদঘর্ম হয় পুলিশের। এ অবস্থায় অনেকটা ‘কালুরঘাটের বিকল্প’ এবং বিনোদন সংশ্লিষ্ট একটি সড়ক গোলচত্বর এলাকায় সংযোগ করা হলে গাড়ির চাপ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এতে যানজট সামলানো যেমন কঠিন হবে, তেমনি দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা যাত্রী ও পর্যটকবাহী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার, বান্দরবানের উদ্দেশে যাওয়া যানবাহনগুলো গোলচত্বরটি ব্যবহার করেন। সময়ে সময়ে এ এলাকার যানজট যাত্রী সাধারণের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন জনগণ। জানা গেছে, প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে ৮০ শতাংশের কাজ শেষ। সড়কটি কর্ণফুলী তীর ঘেঁষা হলেও যুক্ত হবে বাকলিয়া নতুন ব্রিজের বশরুজ্জামান চত্বরের সাথে। অর্থাৎ বাকলিয়া এনএমএমজে কলেজের সামনে দিয়ে।
স্থানীয় ও সচেতন মহল বলছেন, প্রতি বৃহস্পতিবার, শনিবার এবং রবিবার দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের প্রতিটি যানবাহনের চাপ এ এলাকায় প্রভাব ফেলে। অনেক সময় যানজট বৃদ্ধি পেয়ে রাহাত্তারপুল, চাক্তাই, মেরিনার্স সড়ক গিয়ে ঠেকে। বিপরীতে সেতু পেরিয়ে টোল ব্রিজ পর্যন্ত যানজট হয়। আর এ রুটে ২২টি রুটের যানবাহন চলাচল করে বিধায় নিত্য যানজট লেগেই থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় চালক-যাত্রীসহ সকলকে।
সরকারি সংস্থায় কর্মরত এক প্রকৌশলী বলেন, বশরুজ্জামান চত্বরটি ৫ সড়কের মোড়। একদিক থেকে যানবাহন আসলে আরও চারদিকে গমনের সুযোগ রয়েছে। তাই এখানে প্রতিনিয়ত ২০ উপায়/প্রকারের যান চলাচল করে। নতুন সড়কটি যুক্ত হলে চত্বরটি ৬ সড়কের মোড় হয়ে যাবে। সুতরাং এখানে ৩০ উপায়/প্রকারের যান চলাচল করবে। তখন যানজটের মাত্রা আগের তুলনায় আরও বাড়বে। তবে সেক্ষেত্রে যদি মোড়ের উপর দিয়ে ওভারপাস, আন্ডারপাস বা ফ্লাইওভার করা হয়, তখন যানজটের মাত্রাটা আর হবে না। একইসাথে এ মোড়টা বর্তমান স্থল থেকে আরও আধা কিলোমিটার উত্তরে নিয়ে গেলে ভাল হবে। তখন ভোগান্তিমুক্ত হয়ে চলাচল করতে পারবে যানবাহন। তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক বলেন, ‘সড়কের কাজ শেষ হলে আপাতত বশরুজ্জামান চত্বরের সাথে সড়কটি সংযোগ করে দিবো। নতুন আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ওভারপাস, আন্ডারপাস, ফ্লাইওভার বা কর্ণফুলী সেতুর নিচ দিয়ে সড়ক করা যায় কি না, তার পরিকল্পনা চলছে। বর্তমানে সে বিষয়ক ফিজিবিলিটি টেস্ট চলমান রয়েছে, সেটি শেষ হলেই আমরা সিটি কর্পোরেশন, সড়ক বিভাগ, সিএমপি, ওয়াসাসহ স্টেক হোল্ডারদের সাথে বসবো। তাদের পরামর্শ মতে কী করলে ভাল হবে, সে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হবে। তার আগে যে ভোগান্তি তৈরি হবে, তা সাময়িক।’
সিডিএর বাঁধ কাম সড়কের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কিছু কাজ বাকি আছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজ শেষ হতে আরও এক বছরের মত সময় লাগতে পারে। তখন কলেজের সামনে সড়কটি যুক্ত হলে মূল সড়ক আরও অনেক বড় দেখাবে। এখন যে বাস, ট্যাক্সিসহ ছোট গাড়ি পার্কিং করে একটা অবৈধ টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে, তা আর থাকবে না। ঠিক একইভাবে কালুরঘাট প্রান্তে যেখানে সড়ক সংযুক্ত হবে, সেখানে যাতে যানজট না হয়, সেজন্য আমরা ‘ইউ লুপ’ তৈরি করে দিবো, যাতে সুশৃঙ্খলভাবে যান চলাচল করতে পারে। এ সড়কে ২২টি রুটের গাড়ি একযোগে চলাচল করে। তাই চাপটা সবসময় বেশি থাকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের শুরুতেই ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এখন তা বেড়ে ঠেকেছে ২ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকায়। প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪ ফুট উঁচু ও ৮০ ফুট প্রশস্ত চার লেনের সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ১২টি খালের মুখে জোয়ার-ভাটা প্রতিরোধক রেগুলেটর ও পাম্পহাউস স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাকলিয়ার বলিরহাট, কল্পলোক এলাকার রাজাখালী খাল ও এর দুটি শাখা খাল, দুটি সাব-খাল, ফ’য়স খাল, নোয়াখালী খালের মুখে পাইলিং ও বেইজ ঢালাই করে রেগুলেটর ও পাম্পহাউস স্থাপন করা হয়েছে। আমরা মনে করি সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই সম্ভাব্য যানজট এড়ানো বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যানজটমুক্তির পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি মনে করে যাত্রীসাধারণ।