‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার শপথ নিল বিএনপি

14

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন বাংলদেশ গঠনের শপথ নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এই শপথ নেন নেতাকর্মীরা।
কবরের সামনে সমবেত হয়ে তারা ‘মুক্ত পরিবেশে’ নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন বলে তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, নতুন করে গড়ে তোলবার জন্য নিজে কাজ করছেন; সেই বাংলাদেশকে গড়ে তোলবার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি।
গতকাল রোববার বেলা ১১টায় মির্জা ফখরুল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জিয়ার করবে ফুল দেন। সেখানে তারা জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। খবর বিডিনিউজের।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, যে কোনো বালাই আসুক না কেন, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা, মুক্তবাজার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাব।
এমন সময় এবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে, যার প্রায় মাসখানেক আগে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা থেকে পড়ে গেছে আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের সরকার। এই দীর্ঘসময় ক্ষমতার বাইরে থেকেও রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করে বিএনপি তার রাজনীতি টিকিয়ে রেখেছে, যা এখনও আরও উজ্জীবিত।
ক্ষমতার পালাবদলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে, যারা একটি ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত’ পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন আয়োজন করবে বলে প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। এ অবস্থায় রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারটি নির্বাচন পর্যন্তর অপেক্ষামাত্র।
জিয়াউর রহমানের করবের পাশে দাঁড়িয়ে ফখরুল বলেন, আজকে ২০২৪ সালে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তার জন্যে বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। বিএনপিরই সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে, ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে শুধু গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করার জন্য।
আমরা আজকে দলের প্রতিষ্ঠার দিনকে স্মরণ করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজকে আমরা এই দিনটিকে মুক্ত-স্বাধীন পরিবেশে পালন করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি সবসময় সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছে, আগামী দিনেও সঠিক রাজনীতি করবে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
এখন বিএনপির মূল কাজ হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আদর্শগুলোকে বাস্তবায়িত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাকে প্রতিষ্ঠিত করা।

চন্দ্রিমা উদ্যানে নেতাকর্মীদের ঢল : বিএনপির জন্মদিন পালনে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢল নামে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসেন।
প্রায় ১৫ বছর পর এই প্রথম চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার করব ঘিরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেল। আওয়ামী লীগ আমলে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মিছিল নিয়ে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে রাখত পুলিশ।
গতকাল এই কর্মসূচিতে জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, নাসির উদ্দিন অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শাম্মী আখতার, মাহবুবুল হক নান্নু, হারুনুর রশীদ, সেলিম রেজা হাবিব, কাজী আবুল বাশার, আমীরুজ্জামান শিমুলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির যাত্রা যেভাবে শুরু : ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের ‘যূথবদ্ধ শক্তিমঞ্চ’ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।
বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল-জাগদল বিলুপ্ত করে বিএনপির যাত্রা শুরু হয়। এই দলে যুক্ত হয় মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কাজী জাফর আহমেদের ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, শাহ আজিজুর রহমানের মুসলিম লীগ, মাওলানা আবদুল মতিনের বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও রসরাজ মন্ডলের বাংলাদেশ তফসিলি ফেডারেশন।

জিয়া থেকে খালেদা : ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলের চেয়ারম্যান হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল সেনাসদস্যের হাতে নিহত হন তিনি। তার মৃত্যুর পর কিছু দিন বিএনপির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এরপর খালেদা জিয়া দলের দায়িত্বে আসেন ১৯৮৩ সালে।
বিএনপির ৪৬ বছরের ইতিহাসে ৪১ বছর ধরে দলের একটানা সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজায় খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমান।