পূর্বদেশ ডেস্ক
দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। গতকাল শনিবার রাতে তাকে এ পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে। তার মা ড. সুফিয়া আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দেশের বাইরেও পড়াশোনা করেছেন তিনি। সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তার আগে ১৯৮৪ সালে জজ আদালতের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
তিনি ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৫ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর শিক্ষা চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঘোষণা দেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ) সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এদিকে, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা দেড়টার দিকে জানা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে বেলা দুইটার দিকে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান।
পরে বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি ও বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাঁরা আইন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন,এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান উল্লেখ করেন, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডসমূহ রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেজ টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদেরকে শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজ কোর্টগুলো ও রেকর্ড রুম রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।
উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী আইন উপদেষ্টা পদত্যাগপত্রগুলো প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন।
সদ্যসাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগ দেন। তিনি ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।