নতুন নগর পিতাকে বরণে প্রস্তুত চসিক

37

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদে বসতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার নাগাদ চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারেন তিনি। এদিকে নতুন নগরপিতাকে বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে চসিক। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই নতুন মেয়রকে বরণের আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
নিয়ম অনুযায়ী চসিক মেয়রের শপথের আয়োজন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাবার পর শপথের ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কাছে মতামত চাওয়া হয়। গত সোমবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে শপথের পক্ষে মতামত পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণে সংশোধিত প্রজ্ঞাপণ জারি করে। পুরাতন প্রজ্ঞাপনে ৩নং ক্রমিকে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নাম নতুন প্রজ্ঞাপনে বিলুপ্ত করা হয়। ফলে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা রইলো না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মেয়র হিসেবে শপথ নিবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শপথের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘মেয়রদের অপসারণ করে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। ফলে মেয়র হিসেবে শপথ নিতে ডা. শাহাদাতের আর কোনো বাধা নেই। আমরা প্রজ্ঞাপন হাতে পেয়েছি। আশা করছি রবি সোমবার নাগাদ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হতে পারে।’
নতুন মেয়রের বরণের বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। শপথের দিন নির্ধারণ হলে অবশ্যই সেটি আমাদের জানানো হবে। সে অনুযায়ী আমাদের আনুষাঙ্গিক কিছু কাজ থাকে। সেগুলোর প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। এছাড়া আমরা নতুন মেয়রকে রিসিভ করার জন্য প্রস্তুত আছি।’
সোমবার নাগাদ শপথ নিলে ডা. শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ হবে ১৬ মাস। যদি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে তিন মাস আগে তাকে পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ১৩ মাস।
শপথ নেওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘চসিক মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আমার প্রথম কাজ হবে চট্টগ্রামবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করা। চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশাকে সামনে নিয়ে সেগুলো সমাধানে কাজ করে যাব। আমি অনেক আগে থেকেই দাবি করে আসছি নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত করার। এটি একটি যৌক্তিক দাবি। কারণ নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে নিয়ে চসিকের অধীনে একসাথে কাজ করার সুযোগ হবে। তাতে নগরীতে পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়ন না হওয়ার মূল কারণ, সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এ কারণে রাস্তাঘাট সংস্কারসহ সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ আজকে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারি সেবা সংস্থাগুলোকে একসাথে এনে উন্নয়ন কাজের সমন্বয় করতে হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষাদানে ব্যবস্থা গ্রহণসহ পর্যায়ক্রমে সকল উন্নয়ন কাজ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চসিকের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রæয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পাওয়ায় গত ১ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। রায়ের পর ৮ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। ১৪ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় থেকে শপথের পক্ষে মতামত পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। সর্বশেষ গতকাল সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারণের বিষয়ে সংশোধনপূর্বক চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেন নাম বিলুপ্ত করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ১৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ সংশোধন করে সরকার। ১৯ আগস্ট সংশোধিত আইন অনুযায়ী, রেজাউল করিম চৌধুরীসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়।