নতুন নগরপিতা ডা. শাহাদাত

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

শপথ নিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। চসিক মেয়রকে শপথপাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ।
গতকাল রবিবার সকাল পৌনে ১১ টায় সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়।
শপথ পাঠ শেষে চসিকের নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবে এমন একটি জায়গায় রয়েছে, যেখানে পাহাড়, সমুদ্র, পর্যটন, স্পেশাল ইকোনমিক জোন থেকে শুরু করে প্রতিটিতে এ চট্টগ্রাম নগরীর ওপর দিয়ে যেতে হয়। কাজেই চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে- এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
চসিক মেয়র বলেন, আমরা দেখেছি বাংলাদেশের জিডিপিতে গার্মেন্টস খাত, মানবসম্পদ, কৃষিখাত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এসেছিল। আর এ তিনটি খাত এখনও পর্যন্ত জিডিপিতে অবদান রাখতে পারলেও চতুর্থ আরেকটি খাত জিডিপিতে অবদান রাখতে পারছে না; সেটি হলো পর্যটন খাত। যেই পর্যটন শিল্পকে ব্যবহার করে সার্কভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের কথা বলে এ খাতকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ খাতটিকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম এমন একটি জায়গায় আছে; যেখানে দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবার প্রথমেই কক্সবাজারের কথা আসে। এরপর চিন্তা করেন বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি; এসব জায়গায় চট্টগ্রাম শহরের ওপর দিয়ে যেতে হবে। এ শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে, তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি কাজে দিবে। প্রধান উপদেষ্টা এদিকে নজর দেবেন। নগরীর অনেক রাস্তা-ঘাটের অবস্থা বেসামাল অবস্থায় রয়েছে। রাস্তা-ঘাটের সমস্যা দ্রæতই ঠিক করা হবে।
নগরীর জলাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে চসিকের নতুন মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতার প্রকল্প যেটি চসিকের মাধ্যমে হওয়ার কথা ছিল; সেটি ২০১৬ থেকে সিডিএর মাধ্যমে হচ্ছে। ১১ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের এ প্রকল্প ২০২৬ সালে শেষ হবে। তখনই জলাবদ্ধতার একটি রেজাল্ট পাব। আর নগর সরকার এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করলে সেবা ও উন্নয়ন আরও পরিকল্পিতভাবে হবে।
ডা. শাহাদাত বলেন, চসিকের মেয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে। তাই আমি মনে করি, এখানে যারা সেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ কমিশনারসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চট্টগ্রামকে একটি ‘প্লেয়িং সিটি’ করার চেষ্টা করবো। সেক্ষেত্রে সবার সহগযোগিতা কামনা করছি। কারণ এটা একটা সিস্টেমের ব্যাপার। অন্যান্য করপোরেশনের চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নাগরিক বেশি। এখানে প্রায় ৭০ লাখ নাগরিক রয়েছেন। এটা একটা বড় শহর। এ শহরটা আমার একার নয়; এটা আমাদের। এটা মাথায় রেখে যদি সবাই কাজ করি, তাহলে চট্টগ্রাম শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গর্ব করে বলতে পারবে। ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি, হেলদি সিটি’ এটা আমার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। এ ইশতেহার বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
ডা. শাহাদাত হোসেনের একন্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী জানান, ‘সচিবালয় থেকে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে যান। এ সময় চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
সূত্র মতে, ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে সকালে রেলপথে চট্টগ্রাম আসবেন ডা. শাহাদাত। দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দলীয় নেতারা ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানাবেন। পরে সেখান থেকে হযরত আমানত শাহ (র.) এবং হযরত বদর শাহ (র.) এর দরগাহ জেয়ারত করবেন তিনি। এরপর তিনি সিটি করপোরেশনের নতুন ভবনে (লালদীঘির পাড়) একটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন। সেখানেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।
সেখান থেকে তিনি বাদে আসর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া শেষে মোনাজাতে অংশ নিবেন। পরে বাসায় ফিরবেন। আর পরদিন থেকে তিনি নিয়মিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অফিস করবেন বলে জানা গেছে।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা ও দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের পিপি এডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের পিপি এডভোকেট মফিজুল হক ভ‚ঁইয়া, বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পিপি এডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ, ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) রাশেদুল মান্নান, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আইয়ুব চৌধুরী, এয়ার কমোডর (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মাইনুদ্দিন প্রমুখ।
শপথের পর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে যান মেয়র ডা. শাহাদাত। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম মহানগরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালের ২ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহাদাত হোসেন। ছাত্রদলের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভ‚মিকা রাখেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এমবিবিএস পাস করার পর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। নগরীর বাকলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি ছিলেন তিনি। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও করা হয়েছিল ডা. শাহাদাতকে। তিনি নগর বিএনপির একাধারে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর সর্বশেষ আহŸায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি পেশা জীবনে একজন সফল চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ফিজিক্যাল মেডিসিন বিষয়ে এমডি করেন। চিকিৎসা পেশায় বেশ সুনামও রয়েছে তার।