এম এ হোসাইন
মনজুরুল আলম মঞ্জু ও মোহাম্মদ আবু মুসাকে নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। সদ্য ঘোষিত মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহব্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তারা। তবে একাধিক মঞ্জু ও মুসা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া মঞ্জু ও মুসা আসলে কারা, তা নিয়ে বিভ্রান্তি চরমের দিকে যাচ্ছে।
জানা গেছে, নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহব্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহব্বায়ক করা হয়েছে মনজুরুল আলম মঞ্জুকে। অথচ নগর বিএনপিতে মঞ্জু আছেন তিনজন। নামের মিলের কারণে কোন মঞ্জুকে পদ দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা। নামের মিল থাকা তিন নেতা হলেন সাবেক নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মনজুরুল আলম মঞ্জু, নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা মনজুরুল আলম মঞ্জু এবং কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মনজুর রহমান চৌধুরী মঞ্জু।
অন্যদিকে একই কমিটির সদস্য করা হয়েছে মোহাম্মদ আবু মুসাকে। কিন্তু আবু মুসা নামে নগর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন দুই নেতা। একজন সাবেক কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, অন্যজন সাবেক কমিটির সদস্য। নামের মিল থাকা দুই নেতার মধ্যে কোন মুসা স্থান পেয়েছেন, সেটা নিয়েও বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির আহব্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, একাধিক মুসা ও মঞ্জু থাকাতে ভুল হতে পারে। কমিটিতে যে মঞ্জু সেটা কাট্টলীর মঞ্জু, তাকে কেউ কেউ ‘তেল মঞ্জু’ বলেও ডাকে। আর মুসার বাড়ি আগ্রাবাদে, তিনি আগের কমিটিতেও ছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহব্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর একটি অনুষ্ঠানে সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. আবু মুসাকে মিষ্টি খাওয়ান কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর মুসাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে কথা হলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, কোন মুসাকে পদ দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে একটু কনফিউশন আছে। আমি যে মুসাকে (সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক) মিষ্টি খাওয়ালাম সেটা ছাড়া অন্য কোন মুসা আন্দোলন-হামলা-মামলায় ছিল কিনা আমার নলেজে নেই। হামলা মামলায় ছিল না, এমন কেউ কমিটিতে থাকার কথা না। এটা নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি অন্য কোন মুসাকে চিনিও না। বিএনপির কাউকে বললে চিনবে কিনা জানি না।
তিনি বলেন, আমি যে মুসাকে চিনি, তিনি বিএনপি পাগল লোক। বহুবার কারা নির্যাতিত হয়েছেন। তার পরিবারের সবাই বিএনপি করে। আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিল না, এমন কেউ এই কমিটিতে থাকার যোগ্যতা রাখে না। এ বিষয়ে আমি কেন্দ্রে কথা বলবো।
নগর বিএনপিতে তিনজন মনজুরুল আলম মঞ্জু থাকলেও মূলত সাবেক নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের নামের মিল রয়েছে বেশি। এর মধ্যে সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মননজুরুল আলম মঞ্জুর বাড়ি বিবিরহাট এলাকায় হওয়ায় তিনি ‘বিবিরহাটের মঞ্জু’ নামে পরিচিত। অপর দিকে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা মনজুরুল আলম মঞ্জুর বাড়ি কাট্টলী এলাকায় হওয়াতে তিনি ‘কাট্টলীর মঞ্জু’ নামে বেশি পরিচিত।
কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক মনজুরুল আলম মঞ্জু ও সদস্য মোহাম্মদ আবু মুসার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আলম খাজা বলেন, মনজুরুল আলম মঞ্জু হচ্ছেন বিবিরহাটের মঞ্জু (সাবেক যুগ্ম সম্পাদক)। আর দুই মুসা নিয়ে একটু বিভ্রান্তি আছে। আমাদের আহব্বায়ক ও সদস্য সচিব ঢাকায় গেছেন। সেখানে বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে আসবে।
তবে তার কিছুক্ষণ পরেই শওকত আলম খাজা জানান, কমিটির যুগ্ম আহব্বায়ক মঞ্জুর আলম মঞ্জু হচ্ছেন কাট্টলীর মঞ্জু। আবু মুসা হচ্ছেন গোসাইলডাঙ্গার মুসা।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, কমিটিতে যে মঞ্জু সেটা কাট্টলীর মনজুরুল আলম মঞ্জু। তিনি সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। মুসা হচ্ছেন গোসাইলডাঙ্গার মুসা। তিনি আগে নগর বিএনপির সদস্য ছিলেন। ছাত্রদলে আমার কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
নগর বিএনপির কমিটিতে স্থান পাওয়া দুই নেতাকে নিয়ে বিভ্রান্তি তৃনমূলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দলের নেতাদের মধ্যেও এই নিয়ে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি।
নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনজুরুল আলম মঞ্জু বলেন, আমরা তিন মঞ্জু আছি। একজন কোতোয়ালীর মঞ্জু, একজন কাট্টলীর, আরেকজন আমি। কমিটিতে আমার নাম দেখলাম। আহব্বায়ক ও সদস্য সচিবের সাথে কথা বলেছি, তারা ভাল-মন্দ কিছু বলে না। ওরা যদি নিশ্চিত না করে আমি কি করে নিশ্চিত হব। ৪৫ বছর ধরে দলের ভার টেনে চলছি, এখন এসব নিয়ে কথা বলে মান-সম্মানকে শেষ করবে। যতক্ষণ চিঠি পাচ্ছি না, ততক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না।
একই বিষয়ে কথা হলে নগর বিএনপির সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. আবু মুসা বলেন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল সাহেব আমার পদের কথা নিশ্চিত করেছেন। কমিটির যাদের সাথে দেখা হয়েছে তারাও তো বলেছে। এখানে কনফিউশনের কিছু নেই।
সাবেক কমিটির সদস্য মো. আবু মুসা বলেন, আগের কমিটিতেও (শাহাদাত-বক্কর) আমি মেম্বার ছিলাম। নেতৃবৃন্দের কাছে খবর নিলে আমার সম্পর্কে জানতে পারবেন। শুরু থেকে আমি বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। আমার নাম এটা কনফার্ম। আমার নাম দিয়েছে সেটা আগে থাকেই জানতাম।