নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে গতকাল রবিবার এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। পরিবেশের বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ, পরিবেশ ও প্রতিবেশ উন্নয়ন, বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও বনায়নের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বৃক্ষের গুরুত্ব বিবেচনা করে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬৫টি স্টলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি বৃক্ষ মেলায় গাছের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এর মধ্যে নার্সারি সমিতির ৩৯টি, অনলাইন নার্সারি ফোরাম ১৯টি স্টল রয়েছে। মেলায় ঢুকতে নাস্তার দোকান, আচারের দোকান, ব্র্যাক নার্সারি ও বাংলাদেশ বন গবেষণার স্টলসহ ৬৫টি স্টল দেয় বন বিভাগ।
এদিকে বিকেলে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে,রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিশাল এলাকাজুড়ে লাখো গাছে ঝুলছে আম, জাম, কলা, লিচু, বেল, লটকন, মাল্টা, থাই লঙ্গান, কদবেল, কিং অব চাকাপাতসহ শত শত প্রজাতির ফল গাছ। আছে বনজ, ঔষধি, সৌন্দর্যবর্ধকসহ হাজারও প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ। বাদ পড়েনি দেশি-বিদেশি ফুল মেন্ডাভিলা, অ্যালমন্ডা, এরোমেটিক জুই, কিং অব প্যারাডাইস, মনোরমা, মিনি রাঙ্গন, বাগান বিলাস, মোচান্ডাসহ শত প্রজাতির ফল। গাছের পাশাপাশি বীজ, সার, মাটি, কীটনাশক, টব, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, টব বা গাছ রাখার বিভিন্ন আসবাবপত্রও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি গাছের দাম ২০ টাকা থেকে শুরু করে রয়েছে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। দর্শণার্থীরা মেলায় প্রবেশ করলে কোনো টিকেট কাটতে হবে না। তবে মেলা এলাকায় বৃষ্টি হওয়াতে কিছুটা কাদাযুক্ত ছিল।
মেলায় কথা হয় আগ্রাবাদের বাসিন্দা শামিমা আফরোজার সাথে। তিনি স্কুল পড়–য়া সন্তানকে নিয়ে আসেন বৃক্ষমেলায়। তিনি বলেন, প্রতি বছর বৃক্ষমেলার জন্য অপেক্ষা করি। এখানে আসলে মনটা ঠান্ডা হয়ে যায়। বাচ্চাদের বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। লাগানোর জায়গা নেই, তবুও বেলকনি ও ঘরের ভিতরে রাখার জন্য কিছু গাছ কিনতে এসেছি।
বনফুল নার্সারির মালিক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, নানা প্রকার গাছের বনসাই, নৌকা, ফুল-ফলের সমাহার রয়েছে। এছাড়া আমরা এখানে বিভিন্ন ডিজাইনের টব রেখেছি, যেটা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে।
হিলভিউ নার্সারির মালিক মো. সেলিম বলেন, দুই হাজারের উপরে চারাগাছ এনেছি। একদিনে আট হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আমরা ভাল বিক্রি করতে পারবো।
কসমো নার্সারির ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, দেশি ফলের চেয়ে বিদেশি ফল রেখেছি। আজকে ৬ হাজার রকমের গাছ এনেছি। এখানে ৩৫ হাজার টাকা দামের পিং পং ফলের গাছ রয়েছে, যেটা দর্শণার্থীদের আকৃষ্ট করছে।
এদিকে মেলা উপলক্ষে দর্শণার্থী ছিল খুবই কম। বিক্রেতাদের মতে, উদ্বোধনীর প্রথম দিন হওয়াতে তেমন দর্শণার্থী আসেনি। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে দর্শণার্থীর সংখ্যা বাড়বে। আবার বর্ষা মৌসুমে মানুষ খুব কম আসে।
চাঁদা আদায়ের অভিযোগ :
এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে নার্সারি মালিক সমিতির বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্টল মালিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে আমাদের প্রতিটি দোকান থেকে ৬ হাজার টাকা করে নিয়েছে নার্সারি সমিতির নেতৃবৃন্দরা। অথচ আমাদের পানি, টয়লেট ও লাইটিং এর সুবিধা দিচ্ছে না। অবৈধভাবে মেলার নাম দিয়ে এত টাকা বাণিজ্য করতে পারে না। খরচের জন্য হয়তো এক হাজার টাকা নিতে পারতো। আগে বন বিভাগের মেলায় আমাদের এমনি স্টল দিতে বলতো। গতবার সিটি কর্পোরেশনের মেলায় আমরা পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছি। এবার হাতে হাতে টাকা জমা নেয়াতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে ধারণা করছি। সমিতির নাম দিয়ে বন বিভাগ চাঁদা নিচ্ছে আমাদের কাছ থেকে’।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম মুঠোফোনে বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের কয়েকবার সভা হয়েছিল। সেখানে তারা আমাদেরকে কিছু খরচ তুলতে বলেছিলো। তারা নাকি বাজেট সংকট থাকাতে ডেকোরেশনের খরচ দিতে পারবে না। তাই তুলেছি। পরে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি কথা ঘুরিয়ে সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলাপ করে জানাবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পরে সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যা তুলেছি আমাদের সমিতির মাসিক টাকা। কেউ টাকা চাইনি। এক বছরের ৫০০ টাকা করে ১২ মাসের ৬ হাজার টাকা করে নিলাম। আমরা কোনো টাকা তুলিনি। বন বিভাগ কেন টাকা চাইবে?
মেলা কমিটির অফিসে এক কর্মকর্তা টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আসলে আমাদের বাজেট ছিল এক লাখ টাকা। তাই ডেকোরেশনের টাকাটা সমিতিকে তুলতে বলা হয়েছিল। সে বিষয়ে স্যারেরা ভাল বলতে পারবেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক পূর্বদেশকে বলেন, নার্সারি সমিতি টাকা তুললে তা তাদের বিষয়। মেলা উপলক্ষে কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না। এভাবে কেউ নিলে তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।