নগরীতে ভয়ঙ্কর ‘ধর্ষকচক্র’

66

নগরীতে ভয়ঙ্কর অপরাধীচক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তারা সবাই প্রাইভেটকার চালক। এ চক্রটি কৌশলে কিশোরীদের প্রাইভেটকারে তুলে ধর্ষণের পর ছেড়ে দেয়। এ সময় তারা ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে রাখে। পরবর্তীতে চিত্র ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে বারবার ধর্ষণ করে। এ চক্রের শাহাব উদ্দিন নামে এক সদস্য নিহত হয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’। শ্যামল দে নামে অপরজন গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত শ্যামল দে পুলিশকে জানিয়েছে, এ চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে। তারা এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটিয়েছে।
তাদের টার্গেট কিশোরীরাই। কারণ হিসেবে বলেছে, কিশোরীরা ভয় পায় বেশি এবং সবকিছু বুঝে উঠতে পারে না। তাদেরকে ধর্ষণের পর ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে কোন এক স্থানে নামিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, নগরীতে চালকদের সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা তাদের গাড়ির মালিকের সন্তানদের স্কুল-কলেজে পৌঁছিয়ে দেয়ার পর মধ্যবর্তী সময়ে ২-৩ জন চালক একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় ওঁৎ পেতে থাকে। একজন চালক গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে থাকে। অপর একজন চালক কিশোরী বয়সের কোন মেয়ে একা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কৌশলে মেয়েটির গতিপথ যেদিকে সেদিকের কাছাকাছি কোন স্থানের ঠিকানা জানতে চায়। মেয়েটি ঠিকানাটি বললেও তার সঙ্গে কথা চালিয়ে গন্তব্যস্থল দেখিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটির সাথে কথা বলতে বলতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেট কারের কাছাকাছি নিয়ে আসে। প্রাইভেট কারের পিছনের দরজাটি সে সময় খোলা থাকে। মেয়েটি পিছনের দরজা বরাবর আসার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক কৌশলে মেয়েটি বুঝে উঠার আগেই পিছনের সিটে বসা ব্যক্তি মেয়েটিকে গাড়ির ভিতরে তুলে ফেলে। গাড়িতে তোলার পর শহরের বিভিন্ন নিরিবিলি রাস্তা প্রদক্ষিণ করে মেয়েটিকে গাড়িতে থাকা চালকরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর মেয়েটিকে ধর্ষণচিত্র ভিডিও করা হয়েছে এবং কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয় দেখিয়ে নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। একেক সময় একেকজন চালক তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়।
কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন বলেন, এটি একটি ভয়ংকর চক্র। চক্রটি ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। আমরা চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি সদস্যদেরও শনাক্ত করেছি। তাদের শিগগির গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ জানায়, এ চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে। তারা বিভিন্ন ব্যক্তির গাড়ি চালক। সবাই প্রাইভেটকার চালায়। তাদের মালিকের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেয়ার পর আবার আনা পর্যন্ত যে সময়টুকু, সেটাকেই কাজে লাগায় তারা। তারা বিভিন্ন স্কুল বা মাদ্রাসার সামনে অপেক্ষা করে। একটি গাড়িতে দুই বা তিন জন থাকে। কোন কিশোরীকে দেখলে কোন এক স্থানের নাম বলে সেটি কোন দিকে জানতে চায়। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে কৌশলে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়া হয়। এরপর ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয় রাস্তায়। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বারবার ধর্ষণ করে বলে গ্রেপ্তারকৃত গাড়িচালক জানিয়েছে। তারা বারবার ফোন করে ডেকে আনে। না আসলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পুলিশ জানায়, তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে। সুযোগ বুঝে কিশোরীকে গাড়িতে তুলে নেয়। কিশোরীদের দেখলেই তারা পিছু নেয় এবং কৌশলে গাড়িতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। কোনটা সফল হয়, আবার কোনটা ব্যর্থ হয়। তবে তারা বেশকিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এর আগেও একই কায়দায় প্রাইভেট কারে তুলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে শাহাব উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। শ্যামল দে এ তথ্য আমাদের জানালেও ওই ঘটনায় সে সম্পৃক্ত ছিল দাবি করেছে এবং ওই ঘটনার শিকার মেয়ের পরিচয় জানে না বলে জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত শাহাব উদ্দিন এ চক্রের মূল হোতা। তার পরিকল্পনায় এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যারা এ চক্রের সদস্য তারা সবাই প্রাইভেট কারের চালক। বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে বসে থাকার সময়ে মেয়েদের টার্গেট করে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে এবং সুযোগ বুঝে ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। শুধু ধর্ষণ নয়, অন্য অপরাধেও জড়িত তারা।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান বলেন, কয়েকদিন আগে মুসলিম হাইস্কুলের সামনে থেকে এক ছাত্রকে প্রাইভেট কারে তুলে জিম্মি করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি দিনে-দুপুরে এক ছাত্রীকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে দু’জন মিলে ধর্ষণ করে। এই দু’টি ঘটনার মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কি-না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, গাড়ি চালানোর আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নগরীতে এই ধরনের বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।
উপ-কমিশনার মেহেদী বলেন, গাড়িচালকদের একটি চক্র এ ধরনের অপরাধ করে আসছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ ছিল। গত সোমবার মেয়েটি এসে একই ধরনের অভিযোগ করে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ ধনী পেশাজীবীদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আছে। যারা সকালে গাড়ি করে কর্মস্থলে যান এবং সন্ধ্যায় ফেরেন। অনেক গাড়ি সকালে শুধু বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যায় এবং বিকেলে নিয়ে আসে। মাঝখানের পুরো সময় গাড়িটা থাকে চালকের নিয়ন্ত্রণে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরও এমন গাড়ি রয়েছে। এসব চালকদের নেতৃত্বেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে, যারা মাঝখানের ওই সময়টায় গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করছে। এই বিষয়ে আমরা সতর্ক হয়েছি, গাড়ির মালিকদেরও সতর্ক হতে হবে।