আইনজীবী,সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর (১২৯৩ বাংলা সালের ১৬ কার্তিক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উত্তরে রামরাইল গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন মুনসেফ কোর্টের সেরেস্তাদার। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাই স্কুল হতে প্রবেশিকা, ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ হতে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ হতে বিএল পরীক্ষা পাস করেন।
তিনি প্রায় একবছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯০৭ সালে ত্রিপুরা হিতসাধনী সভা’র সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১৯১৫ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে বড় ভূমিকা পালন করে প্রাথমিক যশ অর্জন করেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণে তিনি মুক্তি সংঘ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা গঠন করেন।কুমিল্লার অভয় আশ্রম-এর কর্মকান্ডের সাথেও তিনিজড়িত ছিলেন এবং ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯০৫সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন।১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয়প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
চিত্তরঞ্জন দাশ এর আহবানে তিনি তিন মাসের জন্য আইন ব্যবসা স্থগিত রাখেন এবং অসহযোগ আন্দোলনএ অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।বঙ্গীয়প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন এবং বঙ্গীয় কৃষিঋণ গ্রহীতা ও বঙ্গীয় মহাজনি আইন পাসের সাথে ধীরেন দত্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলন-এ যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে কখনো বিনাশ্রম আবার কখনো সশ্রম দন্ড ভোগ করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস দলের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালের পর একজন অসা¤প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালের জুন মাসে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে তিনি পূর্বপাকিস্তানে গভর্নরের শাসন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে একটি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আতাউর রহমান খান-এর মন্ত্রিসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর ১৯৬০ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর ‘এবডো’ (ঊষবপঃরাব ইড়ফরবং উরংয়ঁধষরভরপধঃরড়হ ঙৎফবৎ) প্রয়োগ করা হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাঁকে গৃহবন্দি করা হয় এবং এর ফলে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পুত্র দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁদেরকে ময়নামতী সেনানিবাসে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর স্মরণে কুমিল্লা শহরে তাঁর বাসভবনের সামনের রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সড়ক’। সূত্র: বাংলাপিডিয়া