পূর্বদেশ ডেস্ক
ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণার পাল্টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘বুলডোজার মিছিলের’ ডাক দেওয়ার পর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে ছাত্র-জনতা। গতকাল বুধবার রাত ৮টার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। ভেতর থেকে বিভিন্ন স্লোগানের পাশাপাশি ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায় এ সময়। খবর বিডিনিউজের।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মত যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দেওয়া হয়। এসময় নারিকেল গাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায়।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা একজন বলেন, বুলডোজার দিয়ে আমরা আজ স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দেব।
মঙ্গলবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, যিনি ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে পালিয়ে আছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল। সংগঠনের আহব্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি। পরে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, আজ (বুধবার) রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।
এর আগেই গতকাল বিকেলে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন এই দুই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তাতে বলা হয়, হাজারো ছাত্রজনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।
শেখ মুজিবুর রহমান তার এই বাসভবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগের দিনগুলোতে দিকনির্দেশনা দিতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী-পুত্র, পুত্রবধূসহ আত্মীয়দের হত্যা করা হয়েছিল এখানে। এই বাড়িটিকে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রবল গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। কয়েক ঘণ্টা পর গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ।
ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে যায় তিনতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ছয়মাস পূর্তির দিনে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো খুলনার শেখ বাড়ি : খুলনা মহানগরের শেরেবাংলা রোডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভাই শেখ আবু নাসেরের বাড়ি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দোতলা বাড়িটি পরিচিতি পায় ‘শেখ বাড়ি’ হিসেবে। যে বাড়িটি খুলনার ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মুখে ২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্ট কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে শেখ বাড়িতে। এরপর থেকে বাড়িটি ‘পোড়া বাড়ি’ হিসেবে পড়ে ছিল। গতকাল খুলনার সেই ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। শেখ বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে রাত ৯টা থেকে এ ভাঙচুর চালান। পরে তারা দুটি বুলডোজার নিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করেন।
এ সময় ছাত্র-জনতাকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী স্লোগানে উত্তাল হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। শেখ হাসিনার পাঁচ চাচাতো ভাই হলেন, শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বেলাল। তাদের মধ্যে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল সংসদ সদস্য ছিলেন। আরেকজন সংসদ সদস্য ছিলেন শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়। ওই বাড়ি থেকেই মূলত পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।