ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার

1

ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার না করতে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধের সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মূলত ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে মনে করেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। শনিবার এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি দুইটা শব্দ খুব অপছন্দ করি, আমি অনুরোধ করব এই দুইটা শব্দ বলবেন না। একটা ভুলে গেলাম, একটা এবার বলি। সেটা হল- ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করবেন না প্লিজ। আমাদের শুনতে খুব খারাপ লাগে। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বলবেন, নারী ‘নিপীড়ন’ বলবেন।
আমাদের যে আইনটি আছে এটাও ‘নারী ও শিশু নির্যাতন’, ‘এখানেও কোনো এ ধরণের শব্দৃমূল হেডিং ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন’। সো যে শব্দগুলা শুনতে খারাপ লাগে আমরা না বলি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের ওপরে নারীদের নিরাপত্তার সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত করা বা নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব, সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন বলেন ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার না করার জন্য, গণমাধ্যম- আপনাদেরকে যখন অনুরোধ করে তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাদের এই অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়।
কারণ এর মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। এটা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত, প্রত্যাহার করা উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথাবার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়। এই ধরণের পুলিশ কর্মকর্তা যখন একটি প্রতিষ্ঠানে আছেন, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে যদি প্রতিষ্ঠানের চর্চার বা সংস্কৃতির প্রতিফলন এমন হয়, তাহলে আমাদের বাধ্য হয়ে বলতে হবে আমাদের শুধু কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখছি সেখানে চর্চার কোন পরিবর্বতন হয় নি।
ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাহার করে গণমাধ্যম কর্মীদের ধর্ষণের খবর বেশি করে প্রচার করার আহŸান জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একইসাথে তিনি (ডিএমপি কমিশনার) আবার গণমাধ্যমকে বলেছেন কম করে ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশ করার জন্য। এই ধরনের উদ্ধত আচরণ, এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য আচরণ কোনো অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিকভাবে অনুরোধ করব, আপনারা তার কথা প্রত্যাখ্যান করুন। ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে সেটা প্রচার করুন।
মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবাই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, ব্যথিত আমরা রাগান্বিত। বাংলাদেশে যে ঘটনা শুরু হয়েছে বিশেষ করে নারী, কন্যা শিশু ধর্ষণের মাধ্যমেৃ আমরা এর প্রতিকার চাই।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, যেখানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলছি, সেখানে প্রতিটি পদে নারীর প্রতি বৈষম্য; এটা কিভাবে সহ্য করা যায়? এটা সহ্যের বাইরে চলে গেছে কাজেই এই আন্দোলনটাকে আরও জোরালো করতে হবে।