বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অনতিবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা বিপ্লবী সরকার নন, রেগুলার সরকারও নন, আপনারা অন্তর্বর্তী সরকার। আপনাদের কাজ হচ্ছে দ্রæততার সাথে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। অন্যথায় যে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, সেই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন চত্বরে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটি আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে। এখন জনগণের হাতে দ্রুততার সাথে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু করুন। অনতিবিলম্বে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনুন, জিনিসপত্রের দাম সহনীয় করুন। আমাদের দেশবাসী ভোটবঞ্চিত। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে, এটা আপনার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) অন্যতম ম্যান্ডেট। তার মানে হঠাৎ করে একটা নির্বাচন নয়, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দেন।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে আগে ছিল এক গ্রুপের তাফালিং, এখন আরেকগ্রæপ তাফালিং শুরু করেছে। সুতরাং এক দখলদারের পরিবর্তে আরেক দখলদার নয়, এক চাঁদাবাজের পরিবর্তে আরেক চাঁদাবাজ আমরা চাই না।
গণসমাবেশে প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে তিনমাস হয়ে গেছে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেনি, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে, সিন্ডিকেট বহাল আছে, বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। এর অর্থ হচ্ছে, স্বৈরাচারি ব্যবস্থা উনারা ভাঙতে পারেননি। ব্যবস্থা বদল করতে না পারলে কিছুই হবে না। এ কাজ অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েও হবে না। এজন্য কমিউনিস্ট পার্টিকে লাগবে, বাম বিকল্প শক্তি লাগবে।
সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে আলোচনা শুরুর নতুন নতুন তত্ত্ব আনা হচ্ছে- সংস্কার, সংস্কার, সংস্কার। আমরা বলছি- সংস্কারের আগে আলোচনা করুন। উনারা নাকি আলোচনা নয়, কর্মশালা করবেন। আমরা বলি- এনজিও’র কর্মশালা চাই না, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থার পুরো সংস্কার করুন। নির্বাচনে দাঁড়ানো এবং ভোট দেয়ার অধিকার লাগবে। টাকা, পেশিশক্তি, প্রশাসনের কারসাজিমুক্ত ভোট করার সুযোগ তৈরি করুন। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করুন, দলীয়করণমুক্ত করুন। এটাই সংস্কারের মূল কাজ। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তিনমাস লাগবে কেন? ১৫ দিনেই তো সম্ভব।
চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভ‚ঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, ফরিদুল আলম, দক্ষিণ জেলা সিপিবির সভাপতি কানাই লাল দাশ ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন, নিউমার্কেট, সিনেমা প্যালেস, আন্দরকিল্লা হয়ে চেরাগি পাহাড় মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিজ্ঞপ্তি