বাংলাদেশে নতুন করে আরও চারজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; যাদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। আর এই চারজনের মধ্যে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে আক্রান্তদের একটি ‘ক্লাস্টার’ থেকে; তবে সেখানে প্রথম সংক্রমণ কোথা থেকে এসেছিল তা নিশ্চিত হতে পারেনি সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা শুক্রবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নতুন আক্রান্ত চারজনকে নিয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৮ জনে। গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই পাঁচজনে রয়েছে। খবর বিডিনিউজের
অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, নতুন যে চারজনের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তাদের একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ এর মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ এর মধ্যে, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে একজন এবং একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে।
“দুজন আগে যে চিহ্নিত রোগী ছিল তাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। একজন চিহ্নিত একটি ক্লাস্টার রয়েছে সেখান থেকে সংক্রমিত হয়েছেন। চারজনের মধ্যে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন যারা করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।” আক্রান্তদের দুজন ঢাকার বাইরে এবং দুজন ঢাকায় অবস্থান করছেন। চারজনের মধ্যে দুজনের দীর্ঘমেয়াদী রোগ (কোমরবিডিটি) রয়েছে বলে জানান ডা. ফ্লোরা।
তিনি বলেন, “তাদের মধ্যে অন্য কোনো জটিলতা নেই। এছাড়া আগে যারা আক্রান্ত ছিলেন তাদের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ২৬ জনের।
বৃহস্পতিবার ৪ জন সুস্থ হয়ে উঠে বাড়ি ফিরেছেন বলে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল। শুক্রবার নতুন করে আর কারও সুস্থ হওয়ার খবর নেই। অর্থাৎ, আক্রান্তদের মধ্যে সব মিলিয়ে মোট ১১ জন এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়িয়েছেন তারা। আগে শুধু যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, অথবা বিদেশ থেকে এসেছেন এমন কারও সংস্পর্শে ছিলেন তাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছিল।
“যাদের বয়স বেশি হয়েছে, ষাটোর্ধ্ব বা যাদের দীর্ঘমেয়াদী রোগ রয়েছে এমন কারও মধ্যে লক্ষণ উপসর্গ থাকলে নমুনা পরীক্ষা করছি। এছাড়া আগে যাদের নিউমোনিয়া ছিল তাদের নমুনাও পরীক্ষা করেছিলাম। এটা চালিয়ে যাচ্ছি।”
এছাড়া যেসব পেশার মানুষকে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে যেতে হয়, তাদেরও নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।
“তিনি হয়তো জানেন না কার সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে যদি লক্ষণ উপসর্গ দেখা যায় তাদের নমুনাও আমরা সংগ্রহ করছি।”
১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা, মৃতের সংখ্যা ২৪ হাজার : আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার (২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার ২৬৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৯০ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৪৯ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনা ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ১১ মার্চ পৃথিবীব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেদেশে ৮৫ হাজার ৫৯৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে ১৩০০ মানুষ। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৮৬৮ জন। চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৩৪০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৯২ জনের। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৪ হাজার ৫৮৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রানহানি হয়েছে ইতালিতে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজারের বেশি মানুষের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৮৯। সুস্থ হয়েছে ১০ হাজার ৩৬১ জন। স্পেনে আক্রান্ত হয়েছে ৫৭ হাজার ৭৮৬ জন। প্রাণ হারিয়েছে ৪,৩৬৫ জন।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (২৭ মার্চ) ভোর ৬টার পর থেকে সকাল সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত সারাবিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৪৫৪ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৫৯ জন যুক্তরাষ্ট্রের, চীনের ৫৫ জন, দক্ষিণ কোরিয়ার ৯১, ভারতের ৬ জন, মেক্সিকোর ১১০ জন, কাজাখস্তানের ৮ জন, ক্যামেরুনের ১৩ জন, প্যারাগুয়ের ১১ জন ও ভুটানের ১ জন।