দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

3

আ জ ম সামশুল হক

দেশের সাধারণ জনগণ নির্বাচিত সরকার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্থক্য খোঁজেনা। জনগণ স্বস্তি ও শান্তি চায়। দেশ অস্থিতিশীল হলে, তাদের জীবন ধারণ ব্যবস্থা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃঙ্খলা বিরাজ করুক, তাই তাদের কামনা। দেশের অভ্যন্তরে মারামারি – হানাহানি, অত্যাচার – অনাচার, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ দূরীভূত হোক এবং অগ্রগতি – উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চলমান থাকুক, জনগণ তাই প্রত্যাশা করে। ছাত্র -জনতার আন্দোলনে একগুয়েমি শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্ররা এখনও আন্দোলনের মাঠে সরব। কর্মক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয় যে, তারা অঘোষিত ছায়া সরকার। তাদের প্রয়োজনে তারা রাস্তা অবরোধ করে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।তাদের প্রয়োজনে তারা কর্মসূচি ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবীতে রাজপথ করেছে উত্তাল। বঙ্গভবন ঘেরাও করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের আল্টিমেটাম এবং ঐ কর্মসূচিতে মাননীয় আইন উপদেষ্টাকে হাজির হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়। এহেন কর্মকান্ড সত্যিকার অর্থে ধৃষ্টতার সামিল। সম্প্রতি প্রলয়ঙ্করী বন্যায় দেশের ক্ষতি হয়েছে অপুরণীয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই কারণে লেখাপড়ার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এখনও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পূর্ণোদ্যমে চালু হয়নি বলা চলে। ইতোমধ্যে ইন্টার পরিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষবোর্ড পরীক্ষার ফলাফল জানাতে বাধ্য হয়েছে। পাশের হার আশাব্যঞ্জক হয়নি। পাশাপাশি ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীরা অটোপাশের দাবীতে আন্দোলন করছে। ডিগ্রি পরীক্ষার্থীরাও অটোপাশের দাবীতে অনড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ও আন্দোলন শুরু করেছে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে। এক কথায়, শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। উত্তোরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নিমিত্তে শিক্ষা কমিশন গঠন করত: শিক্ষা কার্যক্রম সংস্কার করা জরুরী।
বিগত সরকারের আমলে যে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। তৎকালীন সময়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য উর্ধ্বগতি ছিল, বর্তমানে তা আকাশচুম্বী এবং জনগণের নাভিশ্বাস হয়েছে। বাজার ব্যবস্থা তদারকি / নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্চনীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হরিলুট বন্ধ করতে হবে। নচেৎ জনগণ খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আন্দোলন, অভ্যুত্থান এবং সংবিধান বিতর্ক সৃষ্টি না করে মানুষকে নির্বাচনমুখি করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। পথ ও মতের পার্থক্য থাকলেও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং তাতে অনাকাক্সিক্ষত বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হবে উত্তম কাজ। নির্বাচিত সরকারই অবশিষ্ট সংস্কারের কাজ যথারীতি সম্পন্ন করবে। জনগণের ম্যান্ডেট থাকলে সংবিধান সংযোজন এবং বিয়োজন করা সময়ের ব্যাপার। নির্বাচন ব্যতিরেকে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার শুরুতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের সমালোচনা করুন।’ আত্মশুদ্ধির জন্য কথাটার গুরুত্ব অত্যধিক। এক্ষেত্রে তিনি গঠনমূলক সমালোচনার কথা তুলে ধরেছেন। মাননীয় উপদেষ্টাদের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। উপদেষ্টাদের কাছ থেকে জনগণের অনেক কিছু শেখার এবং জানার আছে। প্রসংগত উল্লেখ করতে চাই, মাননীয় আইন উপদেষ্টা সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘বিগত সরকার প্রধানের পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন।’ এমনিভাবে দেশের কোন সম্মানিত ব্যক্তি যদি কোন মাননীয় উপদেষ্টাকে নিয়ে কট‚কথা বলেন। তাহলে মাননীয় উপদেষ্টা অসম্মানিত বোধ করবেন। কাজেই মহামান্য, মাননীয় এবং সম্মানিতদের মধ্যে উক্তরূপ আচরণ এবং কর্মকান্ড কিছুতেই শোভনীয় নয়।
পরিশেষে বলবো, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টাক্সফোর্স গঠন করে দ্রুততার সাথে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাগবে জনমত সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট কার্যক্রম চিরতরে বন্ধ করুন। চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে আইনে সোপর্দ করুন। অপরাধী – সন্ত্রাসী দের কোন দলীয় পরিচয় নাই, তাদের কঠোর হস্তে দমন করুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্টু শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন পর্যন্ত প্রয়োজনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিন। সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনী গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন। জনগণের আশা – আকাক্সক্ষার প্রতিফলনে দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসুক, তাই আমাদের কাম্য। দেশে সার্বিকভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনন্য। পাশাপাশি নৌ, বিমান, পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাবের কার্যক্রম প্রশংসনীয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক