দেশে প্রথম ‘স্টুডেন্টস হেলথ কার্ড’ চসিক মেয়রের এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকুক

2

’চট্টগ্রাম প্রথম’ অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মহাত্মাগান্ধী চট্টগ্রামে সফরে এসে সমুদ্র বন্দর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি দেখে এ মন্তব্যটি করেছিলেন। একই সময়ে চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নুর আহমদ প্রথম অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছিলেন পৌরসভার আর্থিক ব্যয়ে। তিনিই প্রথম পৌরসভা এলাকায় দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করেছিলেন। নুর আহমদের তেত্রিশ বছর মেয়াদ শেষে যারাই চট্টগ্রাম পৌরসভা, কিংবা পৌর কর্পোরেশন, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, প্রশাসক, মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রত্যেকেই চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিয়েছেন। বর্তমান মেয়র গত বছর নভেম্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অভিভাকের দায়িত্ব নেয়ার পর শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে মনোযোগী হন। তিনি শপথের পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে সরাসরি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেও সাথে মতবিনিময় করেন লালদিঘী পাড়স্থ চসিক লাইব্রেরি ভবনে। সেখানেই তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার গুনগত মানোন্নয়ন, চট্টগ্রামকে ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে তাঁর যে অভিপ্রায় তা ব্যক্ত করেন। আমরা লক্ষ করেছি, এর পরই তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পারিচালিত মেমন জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধিসহ নগরবাসীর জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এ চিকিৎসাসেবা নগরবাসীর কাছে আরো সহজতর করারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন তিনি। তবে সবকিছু পেছনে পেলে এখন মেয়র ডা. শহাদাত হোসেন নগরবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন, একটি সৃষ্টিশীল কর্মের জন্য আর তা হলো সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ। মেয়র শাহাদাতের এ উদ্যোগটিও দেশের কোন সিটি এলাকাতে প্রথম। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয় ‘স্টুডেন্টস হেলথ কার্ড’। গত বুধবার কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে জনা যায়, প্রাথমিকভাবে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। পরবর্তীতে এর সফলতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা বাস্তবায়ন করা হবে। মেয়র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অবশ্যই আশা করেছেন, চট্টগ্রাম নগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ক্রমান্বয়ে এ সেবার আওতায় আনা হবে। এক সময় এটি সারা দেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে-এমনটি প্রত্যাশাও তিনি করেন। কেন এমন উদ্যোগ নিতে গেলেন মেয়র, এমন প্রশ্নের উত্তর তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে খুঁজে পায়। তিনি বলেছেন, “শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা শুধু অভিভাবকদের নয়, বরং প্রতিষ্ঠান ও সিটি কর্পোরেশনেরও দায়িত্ব। এই হেলথ কার্ডের মাধ্যমে শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাদান এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে।” শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়মিত মূল্যায়নের পাশাপাশি হেলথ কার্ডের মাধ্যমে আগাম রোগ শনাক্তকরণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে বলে উল্লেখ করেন মেয়র। এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের শৈশব থেকে দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি চট্টগ্রাম গড়ে তোলা। ব্যক্তিগত হাইজেনিক লাইফ মেইন্টেন করা থেকে শুরু করে নিজের শহরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ববোধ আমরা শিশুদের মাঝে জাগাতে চাই। ” বলা প্রয়োজন যে, মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের এ মহৎ কর্মেও পরিকল্পনায় ছিলেন, চট্টগ্রামের খ্যাতিমান শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুতোষ লেখক প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন চসিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগ। উল্লেখ্য যে, স্টুডেন্ট হেলথ কার্ড-এ কী থাকছে, এর ব্যবহার বিধি নিয়ে একটি গাইডলাইন চসিক শিক্ষা বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, স্টুডেন্টস হেলথ কার্ডে শিক্ষার্থীর পরিচিতিমূলক তথ্য যেমন নাম, জন্মতারিখ, বিদ্যালয়ের নাম, শ্রেণি, অভিভাবকের নাম ও যোগাযোগ ঠিকানা সংরক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত মোট ১৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রেকর্ড সংরক্ষণ করা যাবে। পরীক্ষায় ওজন, উচ্চতা, দাঁতের অবস্থা, চোখ-কান, ত্বক-চুলের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ এবং হিমোগ্লোবিনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কার্ডের একটি পৃথক অংশে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য থাকবে, যাতে বিসিজি, পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, এমআর, পেন্টাভ্যালেন্ট, টায়ফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও র‌্যাবিসসহ গুরুত্বপূর্ণ টিকার রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে। আমরা মনে করি, মেয়র ডা. শাহাদাতের এ উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের সৃষ্টিশীল কার্যক্রমের একটি ধারাবাহিক অধ্যায়, যা সম্পুর্ণ নতুন ও উদ্দীপনাময়। স্বাস্থ্যই সকল কিছুর মূল। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে এ মূল বিষয়টি বড় অবহেলার স্বীকার। স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাদের নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশন তার সাংগঠনিক কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের হেলথ কার্ড দিয়ে একদিকে তাদের স্বাস্থ্যসেবা যেমন নিশ্চিত করা হবে অপরদিকে স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিক গড়ার ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা রাখবে। আমরা কর্মসূচির সফলতাসহ এ ধারা অব্যাহত থাকুক-এমনটি প্রত্যাশা রাখছি।