বাংলাদেশে এক রোগীর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত করার তথ্য দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকার মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
গতকাল রোববার আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এইচএমপিভি আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত করেছি। তিনি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমরা পরে জানাব।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত একজন নারী গত শুক্রবার আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছেন। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে আছেন। তার বয়স ৩০ বছর, বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।
এরপর সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচএমপি ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এইচএমপি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী মহিলা এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। স¤প্রতি চীন ও অন্যান্য দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, এ কারণে বাংলাদেশে এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা সমূহ: ১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। ২. হাঁচি ও কাশির সময় গামছা বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। ৩. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। ৪. আক্রন্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। ৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না। ৭. আপনি জ্বর, কাশি এবং শাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ইউনিট পরিস্থিতির উপর সর্তক দৃষ্টি রাখছে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। তবে এটা শুধু চীনেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের উপস্থিতি আরো আগে থেকেই আমরা পেয়েছি। কাজেই এটা নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।