দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে কোন ছাড় নয়

1

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। একটি উদার মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে রয়েছে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন পরিবেশ আর কোন দেশে আছে বলে আমি মনে করিনা। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চলছে প্রতিনিয়ত নির্যাতন। বলতে গেলে একধরনের স্টীমরোলার চলছে। এই কয়েকদিন আগে ভারতের উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছে। ক্ষতিসাধন করেছে দূতাবাসের। দেশটির গণমাধ্যমে চলছে প্রোপাগান্ডা! ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশ একটি কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছে। নানা ষড়যন্ত্রের কারণে বিশেষ করে একটি কুচক্রী মহলের দেশবিরোধী অপপ্রচারে সাধারণ মানুষের মাঝে, দেশের ভেতর অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে। যে কারণে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে জাতীয় ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। যা দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন আপোস নেই। যে কোনমূল্যে দেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হবে দেশের অখন্ডতা। সব দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ, স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই কোন ধরনের প্রভূত্ব চাইনা; প্রভাব বিস্তার চাইনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে, নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে দেশবাসীকে। কারো হাতের পুতুল হয়ে থাকতে চাইনা। দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল সম্ভাবনা। এগুলোকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে বেশিদিন লাগবেনা। টাকাপাচার, দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ অন্য অনেক দেশ আমাদের থেকে পিছিয়ে থেকেও এখন বেশ সমৃদ্ধ। আমরা যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি তাহলে কেউ আমাদেরকে আটকে রাখতে পারবেনা; আমাদের কোনকিছুতে নাক গলাতে পারবেনা। যে কারণে ঐক্যবদ্ধ থেকে, কারো ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেদেরকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হলে সবাইকে ত্যাগস্বীকার করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল মানুষদের বেশিরভাগই শুরুতেই কোন না কোনভাবে কষ্ট স্বীকার করেছেন। সেজন্য দেশ গড়তে হলে কারো দোষ না খুঁজে, দেশের জন্য কিছু দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের কথা আমরা খুব কমই ভেবেছি। দলের স্বার্থটা আগে দেখেছি। যে কারণে সমৃদ্ধ হয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে দলের একটি বড় অংশ। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। দেশকে পেছনে রেখে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। দেশপ্রেমিক মানুষের অভাব দেশকে ভোগাচ্ছে। অনেক তো হয়েছে ; এবার না হয় দেশের জন্য একটু চিন্তা করি। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, কারো প্রভাব থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই!
এই নতুন বাংলাদেশে সবাই যেন নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে সে বিষয়ে আমাদেরকে নি:স্বার্থভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দল, ধর্ম যার যার কিন্তু দেশটাতো সবার। এ কথা মাথায় রেখে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস এই মুহুর্তে বেশি জরুরি। কারো চোখরাঙানিতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা আমাদের মতো করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবো। এটাই আমাদের অংগীকার হোক। নিজেদের মাথা উঁচু রাখতে কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবেনা। অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হচ্ছে তা যেকোনমূল্যে ধরে রাখতে হবে। আর সেটা হলে কেউ আমাদের উপর আর প্রভাব খাটাতে সক্ষম হবেনা, খবরদারি করতে পারবেনা। বিচ্ছিন্ন হলে, অনৈক্য থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নেবে। ফাঁদে ফেলে সর্বনাশ করবে। তাই ‘দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন ছাড় নয়, আপোস নয়’- এমন দৃঢ় মানসিকতা তৈরি করতে হবে। জীবন দিয়ে হলেও দেশকে রক্ষার শপথ নিতে হবে। আর এর মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হবো সমৃদ্ধির পথে, উন্নতি ও অগ্রগতির পথে।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট