দেশের শান্তি ও সংলাপ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে জাতিসংঘ

2

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যদিও বাংলাদেশে এটি তাঁর দ্বিতীয় সফর। বাংলাদেশের শান্তি ও সংলাপ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সহায়তা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা, কারণ এটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে। বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে-মন্তব্য করে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণ গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির এক নতুন ভবিষ্যতের আশায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। দলগুলো ছয়টি কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে একবার একমত হলে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে; যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে, তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ নিশ্চিত করার ব্যাপারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। সেবারও জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বলেছিলেন। এবার যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ প্রধান বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, তখন আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকেরও বেশি কমানোর ঘোষণা এসেছে। যে কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, খাদ্য সহায়তা কমালে লোকজন আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়বে এবং অনেকে মারাও যাবে। আমরা সেটা কোন ভাবেই হতে দিতে পারি না যে বিশ্ববাসী রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে। তাই আমি জোরালোভাবে এই বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবো যে-এখানে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দরকার।