স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আশানুরূপ উৎকর্ষ সাধিত হতে দেখা যায়নি। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা বরাবরই বিদেশ নির্ভর হয়ে আছি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে গবেষণা কার্যক্রম খুবই হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-শিক্ষকরা যতবেশি তথাকথিত রাজনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত সে তুলনায় গবেষণার ধারে কাছেও নেই। জাতির জন্য বিষয়টা হতাশাজনক। একাডেমিক গবেষণার বাইরে কেউ দেশ ও জাতির অগ্রগতির স্বার্থে কোন কাজে লিপ্ত হলে সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে সহায়তা করা খুবই জরুরি। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় , বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের এক মেধাবী তরুণ নিজের ঘরে গড়ে তুলেছেন একটি ক্ষুদ্র ল্যাব। সেই ল্যাব থেকে তিনি নিজ হাতে বানাচ্ছেন উচ্চ প্রযুক্তির পেশাদার ড্রোন।
এই তরুণের নাম মোহাম্মদ আশির উদ্দিন। এক সময় শখের বসে খেলনা বিমান তৈরি করতেন আশির। আজ তিনি পূরণ করছেন আকাশ জয়ের স্বপ্ন। এই উদ্ভাবনী অভিযাত্রায় এবার তার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
ছোটবেলায় আকাশে উড়তে থাকা বিমান দেখে বিমোহিত হয়েছিলেন আশির। ২০১৬ সাল থেকে গভীর চিন্তা আর নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে খেলনার মতো করে শুরু হয় তার বিমান তৈরির যাত্রা। শুরুর দিকে অনেক বিমানই ভেঙে পড়েছে, কিন্তু ব্যর্থতা তাকে থামাতে পারেনি। পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে ২০১৭ সালের দিকে প্রথম সফল রিমোট কন্ট্রোল বিমান তৈরি করেন তিনি। এরপর ২০২৩ সাল পর্যন্ত তৈরি করেন প্রায় ৬০০টিরও বেশি মডেল বিমান, যার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা পান।
তবে এখানেই থেমে থাকেননি আশির। সময়ের দাবি বিবেচনা করে মন দেন ড্রোন তৈরিতে। একদিন একজন সামরিক কর্মকর্তা তার নষ্ট ড্রোন মেরামতের অনুরোধ করেন। তখন ছয় মাস নিজে নিজে স্টাডি করে তা মেরামত করেন আশির। সেই থেকে বিমান নয়, এখন তিনি তৈরি করেন ভিন্ন মডেলের প্রফেশনাল ড্রোন, যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫-এ।
ড্রোনগুলো সম্পূর্ণ নিজস্ব ল্যাবে তৈরি করেন তিনি। প্রতিটি ড্রোন তৈরিতে লাগে ৬ জনের একটি দলের ১০ থেকে ১৫ দিন সময়। ১০ কেজি ওজনের ড্রোন বিক্রি করেন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়, আর ২০ কেজি ওজনের ড্রোনের দাম ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব ড্রোন চালানো হয় জিপিএস, স্যাটেলাইট এবং রিমোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।উদ্ভাবক আশির উদ্দিন বলেন, ছোটবেলা থেকে বিমান দেখে বিমান বানানোর ইচ্ছা ছিল। ২০১৬ সালে প্রথমে খেলনা বিমান বানিয়ে শুরু করি। এখন পর্যন্ত ৬০০টির বেশি বিমানের মডেল তৈরি করেছি। ড্রোনে আসি ২০২০ সালে। একজন সেনা কর্মকর্তা রিপেয়ার করার জন্য একটি ড্রোন দেন। ড্রোনের জন্য অনেক কোডিং জানতে হয়, অনেক কাজ থাকে। ছয় মাস ধরে আমি এটাকে নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি, এরপর তা ঠিক করতে সমর্থ হই। সেই থেকে আমি ড্রোন বানানোর কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত ২৫টির মতো ড্রোন বানিয়েছি। সামরিক বাহিনীতে এসব ড্রোনের বিশেষ ভ‚মিকা আছে।
তরুণ উদ্ভাবক আশির উদ্দিনের এই সাফল্য ইতোমধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিএনপির। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, বিএনপি সবসময় তরুণ উদ্ভাবকদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং প্রযুক্তিখাতে স্থানীয় মেধাকে সমর্থন দেওয়া আমাদের অগ্রাধিকার। মোহাম্মদ আশির উদ্দিনের মতো মেধাবী প্রকৌশলীরা দেশের গর্ব এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ড্রোন প্রযুক্তির মতো উচ্চমূল্যের খাতে তরুণদের গবেষণা ও উৎপাদনে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করবে, যাতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রযুক্তি অঙ্গনে প্রতিযোগিতা করতে পারে। আমরা চাই স্থানীয় উদ্ভাবন রপ্তানি হোক, তরুণদের হাতেই গড়ে উঠুক ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি।
এদিকে তারেক রহমানের নির্দেশনায় গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আশির উদ্দিনের বাড়ি বাঁশখালীর পশ্চিম পুঁইছড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইজ্জতিয়া স্কুলের সামনে দেখা করতে যায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। সঙ্গে ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহব্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মীর হেলাল, সংগঠনের উপদেষ্টামন্ডলী, সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে দলীয় একটি টিম আশির উদ্দিনের উদ্ভাবন দেখে এসেছেন। সেই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম শাহীন।
আশিরের উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম শাহীন বলেন, আশির উদ্দিন ইতিমধ্যে বিমান ও ড্রোন তৈরি করে তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও বড় কিছু করতে পারবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আশির উদ্দিনের সাফল্য সম্পর্কে জানার পরই তার খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন। গত মাসে আমি তার বাড়িতে গিয়ে শুধু তার প্রযুক্তিগত সক্ষমতাই নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাও দেখেছি। তারেক রহমান সাহেব এ ধরনের মেধাবীদের ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়ন ও প্রযুক্তি খাতে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
আশির উদ্দিনের সাফল্যে আমরা বিএনপি পরিবারের এগিয়ে আশার জন্য আমরা তাঁদের সাধুবাদ জানাই। তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসা উচিৎ মনে করে বিশেষজ্ঞরা।