দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন থমকে গেছে

1

আ,জ,ম,সামশুল হক

প্রবাদ আছে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশপ্রেম সবার মধ্যে থাকে। ইচ্ছা থাকলেওসবাই দেশের জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেননা। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা থাকে।এককথায়, দেশ পরিচালনার জন্য রাজনীতিবিদেরা পরিপক্ষ। অন্তরবর্তীকালীন সরকারের মধ্যে অনেকেই জ্ঞানী-গুণী এবং প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তবে কেউ রাজনীতিবিদ নন। দেশের রাজনৈতিক সংকটে তাঁদের আবির্ভাব। দেশের এহেন গুরু দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তাবে, তা তাঁরা কল্পনা ও করতে পারেননি। এতদসত্তে¡ওদেশের এই ক্রান্তিকালে জনগণ তাঁদেরকে নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে ভেবেছিলেন। পাঁচ মাস পার হতে চলেছে, জনগণের জীবন মানের কোন পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় নয়। তাই এই সরকারের জন্য জনগণের আস্থা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং এই সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে।
অন্তর্বর্তী কালীন সরকার বলতে অস্থায়ী সরকার বুঝায়। তাই সময়ের বিবেচনায় এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার নয়। নির্বাচন কেন্দ্রিক যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তা দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারে প্রবর্তন করা এই সরকারের মূল কাজ হিসেবে বিবেচিত। জনগণ এই সরকারের সাফল্য কামনা করে, তবে সংস্কারের নামে কালক্ষেপনকরা মেনে নেওয়ার নয়। ইতোমধ্যে মাননীয় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বক্তব্য মতে, ‘বিপ্লব করেছি, নির্বাচনের জন্য নয়’। পাশাপাশি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছেন। অন্যদিকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, নির্বাচনের সময় বর্ধিত হতে পারে। উল্লেখিত সাংঘর্ষিক কথার জেরে মনে হয়, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। ঘোড়ার আগে গাড়ি দৌড়ানো অপরিপক্ষতার পরিচয় মিলে। এইসব কাজের ভিড়ে দিন দিন দেশের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে চলেছে। দিন যতই গড়াবে, মানুষ ততই আশাহত হবে। ছাত্র- জনতার আন্দোলনে আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে জনগণ অস্থির হয়ে উঠেছিলেন এবং আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। সত্যিকার অর্থে, বর্তমানে দেশের সাধারণ জনগণ তা ভুলতে বসেছেন। অন্তরবর্তী কালীন সরকারের সংস্কারের কাজে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই বলা যায়। কেননা, সাধারণ জনগণের কল্যাণে কোন কাজ হচ্ছেনা। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ জনগণের চাহিদার সাথে সরকারের কাজের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।সরকারি কাজের বাইরে একটি বৈপ্লবিক কাজের ধারা বর্তমান। যা সরকারকে রীতিমত বিব্রত করে। সরকারের দু’টি কাজ লক্ষ্যণীয়। তম্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, সংস্কার এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ব্যক্তি বিশেষকে পাকড়াও করে খুনের মামলায় জড়িত করা।
দেশের আঞ্চলিক সরকার কাঠামো ভেংগে পড়েছে।দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন থমকে গেছে। সংকুচিত হয়ে গেছে, সাধারণ মানুষের কাজের পরিসর এবং আর্থিক সংগতি। কর্মসংস্থান হারিয়েছে, ১০-১২ শতাংশ মানুষ। বিগত সরকার আমলের দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের ঘটনা আমাদেরকে করেছে নি:স্ব এবং দেশকে করেছে পর্যুদস্ত। উক্ত টাকা ফিরিয়ে আনা কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও কোন অবস্থাতেই ঐ সমস্ত দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া সমীচিন হবেনা। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যত নির্বাচিত সরকার উক্ত বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। নির্বাচিত সরকার হচ্ছে, জনগণের আস্থার প্রতীক। যেহেতু জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে সাংসদ। কাজেই আমাদের জানামতে, নির্বাচিত সরকার থাকবে সংবিধানের আওতাধীন। তাঁদের সংসদ থাকবে, কর্মসূচি থাকবে, আইনের প্রয়োগ থাকবে, প্রয়োজনে সংবিধান ঢেলে সাজানোর দায়িত্বে থাকবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। জনমনে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে নির্বাচিত সরকার। কাজেই জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের চাবিকাঠি একমাত্র নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার।
ডা: শফিকুর রহমান একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য মতে, “ তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বয়সের দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা নিয়ে বোধ জাগ্রত হয়নি “। সত্যি কথা বলার মধ্য দিয়ে তিনি সবার কাছে সমাদৃত হয়েছেন। পক্ষান্তরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিমূলক বই পড়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। ১৯৪৭ সাল পরবর্তী এই ভূখন্ডে যে সংস্কৃতি, শিষ্টাচার এবং জীবনধারা গড়ে ওঠেছে, তার পরিবর্তন অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের বসবাস এই বাংলাদেশে। ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ এই বাংলাদেশ।
২০২৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বপরিমন্ডলে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। এই অর্জন আমাদের দেশের জন্য অতি গৌরবের। এই ভার বইতে গেলে বাংলাদেশে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম এবং জনগণ তাই প্রত্যাশা করেন। কার ও অনুকম্পায় এই দেশের অগ্রগতি হয়নি। এই দেশের যতটুকু অর্জন, তা এই দেশের সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে নতুন করে চেনার প্রয়োজন পড়েনা। সব সেক্টরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগে আছে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে হবে আমাদের পথ চলা। রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে দেশের জাতীয় ইস্যুতে আমাদের থাকতে হবে ইস্পাত কঠিন শপথ। যেমনিভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়নাদের আমরা রুখে দিয়েছিলাম। দেশকে স্বাধীন করে আমরা আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলাম। বাংলাদেশ সবার সাথে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী।তবে কাউকে দূরে ঠেলে দিয়ে কাউকে কাছে টেনে নেওয়ার সফলতায় বিস্বাসী নয়। বলাবাহুল্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা এবং ত্যাগের কথা অনস্বীকার্য।
আগামীতে আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং ব্যক্তি সর্বস্ব রাজনীতি দেখতে চাইনা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমরা যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবো, তবে দলীয় বিবেচনায় নয়। একজন ব্য্যবসায়ীকে রাজনীতিবিদ সাজিয়ে সাংসদ নির্বাচিত করার মনোবৃত্তি আমাদের পরিহার করতে হবে এবং মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি গ্রহণ করবো, দেশের সার্বিক অগ্রগতির পরিচায়ক হিসেবে। ব্যক্তির প্রাধান্য নয়, ব্যক্তিকে বেচে নিবো দেশের প্রয়োজনে। রাজনীতির জন্য রাজনীতি না করে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের পথ চলতে হবে। তবেই দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন সচল হবে, সফল হবে এবং উত্তোরোত্তর দেশের সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা পাবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক