নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, শান্ত বাংলাদেশকে অশান্ত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে, যার প্রভাব চট্টগ্রামেও দেখা যাচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ৮ম তলার ভিআইপি, এস রহমান ও সুলতান আহমদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণিকা স্মারক’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাওলানা শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেশের দামাল ছেলেরা গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আবারও জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছে। ৫৪ বছরের বাংলাদেশে আমরা যা দেখেছি, তার সাক্ষী আমরা নিজেরাই। যে লক্ষ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বরং আওয়ামী লীগ ইতিহাস বিকৃতিসহ নানা অন্যায় করেছে। জুলাই গণবিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পেতে শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, হাজারো শহীদ ও হাজার হাজার আহত পঙ্গুত্ববরণকারী এই সকল মানুষকে যারা হত্যা, অবিচার, নির্যাতন করেছে তার মূলে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। আজকের অনুষ্ঠান থেকে দাবি হচ্ছে এসব মাস্টারমাইন্ডদের আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বিচার করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে অন্য কোনো বিচার যদি শেষ সম্ভব না হয় এই মাস্টারমাইন্ডদের বিচারকার্য শেষ করে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ, আদর্শিক বাংলাদেশ গঠন করতে জুলাই বিপ্লবের শহীদরা জীবন দিয়েছেন। সেদিকে এগিয়ে যেতে পারলে তাদের জীবনদান স্বার্থক হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, সাবেক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির আলাউদ্দিন সিকদার, মহানগর নায়েবে আমির ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মুহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনের দলীয়করণে দেশকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৬ বছর ধরে যত হত্যা, গুম, নৈরাজ্য হয়েছে এর জন্য এক নম্বর দায়ী শেখ হাসিনা। দেশের অশান্তির জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। সাধারণ নির্বাচনের আগে এই সমস্ত ফ্যাসিস্টদের বিচার করতে হবে।
অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এমন ঘটনা জানা নেই, পুলিশ যেভাবে হত্যা করেছে, বিমান থেকে গুলি করে মানুষ মেরেছে। এমন ইতিহাস আর নেই। শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর আহবান জানাচ্ছি।
অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান বলেন, গোটা বাংলাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। নানা আন্দোলন করেও মাফিয়া সরকারকে সরাতে পারেনি। অভাবনীয় ভূমিকায় নেমেছিল আমাদের ছেলেরা। এই স্মৃতি ভুলার মত নয়। ১৮ কোটির বাংলাদেশকে যেন আর কোন জুলুমতন্ত্র গ্রাস করতে না পারে সতর্ক থাকতে হবে।
আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, আগামীর বাংলাদেশে বৈষম্য থাকবে না। অন্যায় দুনীতি থাকবে না। জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদশ গড়তে চাই। আয়নাঘরের মতো কোন ঘর আর হবে না। কোন মানুষ ফ্যাসিবাদের শিকার হবে না।
ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, ৭১ এর ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। ২৪ এর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস কখনো বিকৃত হবে না। শহীদের বেশি স্মরণ করবো, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার স্বৈরচারকে ফিরতে দেব না।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথি ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণিকা স্মারক’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কর্ণফুলী সম্পাদক আফসার উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যক্ষ নুরুল আমিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আমির আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. একেএম ফজলুল হক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মমতাজুর রহমান প্রমুখ।