নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর থেকে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে। বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামে যাত্রাবিরতি দিয়ে ট্রেনটি বিকাল ৩ টায় কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা। সপ্তাহে ছয়দিন এভাবে ট্রেনটি যাতায়াত করলেও গতকাল শনিবার মারাত্মক শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ট্রেনটি। প্রায় ছয় ঘন্টা দেরিতে বেলা ১২ টায় ট্রেনটি ঢাকা স্টেশন ছেড়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দীর্ঘ শিডিউল বিপর্যয়ে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ৮৮৪ যাত্রীকে। একইভাবে মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি ৭টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও সেটিও ছেড়েছে ১০টা ৫০ মিনিটে।
কক্সবাজারগামী যাত্রীরা বলছেন, পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভ্রমণ শিডিউলও এলোমেলো হয়ে গেছে। অর্থাৎ যারা অল্প সময় ভ্রমণের শিডিউল নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছেন তারা কম সময়ও কক্সবাজারে থাকতে পারবে। যে কারনে এমন যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কমলাপুর রেল স্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হলে ডিজিটাল সিগন্যালিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেই ট্রেন চলাচল করায় প্রতিটি ট্রেনই ৩-৬ ঘন্টা দেরিতে ঢাকা ছাড়ছে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ৬৭ জোড়া ট্রেনের শিডিউল বিপর্যস্ত হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছে যাত্রীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে আগেভাগে কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকি সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল সিগন্যালিং মাধ্যমে ট্রেন চলাচল করে। এটির উপর লাইনচ্যুত ট্রেনের একটি বগি পড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে ম্যানুয়ালি সিগন্যালিং সিস্টেমে ট্রেন চালানোর কারনেই শিডিউল বিপর্যয়ের বড় কারণ। বেলা ১২টা নাগাদ ডিজিটাল সিগন্যালিং কাজ সম্পন্ন হলে ওয়েটিং টাইম কিছুটা কমে আসবে। বিকাল নাগাদ এক ঘন্টার বেশি শিডিউল বিপর্যয় থাকবে না।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর প্রতিটি ট্রেনই শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামি সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এসব কমিটিতে রেলওয়ের বাইরের এক্সপার্টও রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। একইসাথে অটোমেটিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার কাজও চলছে। তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি, রেললাইনে কোনো ত্রæটি ছিল কিনা, যারা দায়িত্ব পালন করার কথা তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কিনা সেটি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ঢাকার এমন ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের প্রভাব চট্টগ্রামেও পড়েছে। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে সকল ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। কিন্তু ঢাকায় যথাসময়ে এসব ট্রেন পৌঁছাতে পারেনি। সিগন্যাল সিস্টেমের কারণে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ ট্রেন মাঝপথেই আটকে ছিল। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার হওয়ার পরেই ট্রেনগুলোর শিডিউল থমকে যায়। যথাসময়ে ট্রেন আসা-যাওয়া না করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, বিমানবন্দরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। আন্তঃনগর ট্রেন, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে যথাসময়ে সকল ট্রেন ছেড়ে গেছে। ঢাকা থেকেই বড় ধরনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। সেখান থেকে কে নো ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে আসেনি। খবর পেয়েছি পর্যটক এক্সপ্রেস ১২ টায় এবং ৭০৪ ট্রেনটি ১০টা ৫০ মিনিটে ছাড়ছে। সোনার বাংলা ট্রেনও যথাসময়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার অশোক কুমার দাস বলেন, ‘প্রত্যেকটি ট্রেনই ঢাকা থেকে বিলম্ব করে ছেড়ে আসছে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে সবগুলো ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে আসছে। যদিও ঢাকায় ঢুকতে বিলম্ব হচ্ছে’।