দেড় যুগ পর বাপের ভিটায় পা রাখবেন ড. ইউনূস

12

হাটহাজারী প্রতিনিধি

দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর বাপের ভিটায় পা রাখতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস। আজ বুধবার বিকেলে তার আগমন ঘিরে হাটহাজারীর শিকারপুর গ্রামের বাথুয়া গ্রাম সেজেছে বর্ণিল সাজে। এলাকাবাসীর মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। গ্রামজুড়ে চলছে ড. ইউনূসকে বরণের প্রস্তুতি। গ্রামবাসী তাদের কৃতিসন্তানকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, ড. ইউনূসের আগমন ঘিলে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাথুয়া গ্রামের প্রতিটি ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়সহ প্রধান উপদেষ্টার চলাচলের পথটি দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শেষবারের মত সড়কের সৌন্দর্য্য বর্ধনে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে লিপ্ত। পাশাপাশি নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা এখন ড. ইউনূসের জন্মস্থান বাথুয়া গ্রাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করেছে পুলিশ ক্যাম্প।
প্রসঙ্গত, ড. ইউনুস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের কাপ্তাই সড়ক ঘেষা বাথুয়া গ্রামের হাজী এম নজু মিয়া সওদাগর বাড়িতে একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর ছিলেন একজন জহুরি এবং তার মাতা সুফিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়, তার শৈশব কাটে বাথুয়া গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ১৯৪৪ সালে তার পরিবার চট্টগ্রাম শহরে চলে যান। ড. ইউনূসের পরিবারের সবাই ৫০-৬০ বছর ধরে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন নিরিবিলি নামক একটি ভবনে বসবাস করছেন। এরপরও এখানে রয়েছে তার শৈশব এবং শিক্ষা জীবনের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের স্মৃতি। আরও আছে তার পূর্বপুরুষদের কবর।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আজ সকালে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাবর্তন অনুষ্ঠান অংশ নিবেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় অনুষ্ঠানমালা শেষ করে পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে আসার কথা রয়েছে। বিকেলে ৫টা নাগাদ গ্রামে পৌঁছে তিনি হাজী মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে দাদা-দাদির করব জেয়ারত করবেন। এছাড়া পাশর্^বর্তী মাঠে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করবেন এবং শুনবেন তাদের অভাব-অভিযোগের কথা।
ড. ইউনূসের চাচাতো ভাই কুয়াাইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদিন বেলাল বলেন, বাথুয়া গ্রামের সন্তান ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। এই গ্রামে তিনি প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এখানে তার মুরুব্বিদের কবরও আছে। তিনি তাদের কবর জিয়ারত করবেন। আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আমরা তার অপেক্ষায় আছি।
শিকারপুর ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এম লোকমান হাকিম মেম্বার জানান, ড. ইউনূস দীর্ঘ সময় পর গ্রামের বাড়ি আসছেন, তাও অবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে। তাই আমাদের আনন্দের কমতি নেই। সর্বত্রই চলছে উৎসবের আমেজ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’র (এসএসএফ) নিদের্শনা মতে পুরো এলাকা ও সড়ক-মহাসড়ক কেন্দ্রীক নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানাতে গ্রামের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। প্রধান উপদেষ্টার নিজ জেলায় বহুল প্রতীক্ষিত সফরটি সফল করতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দিকনিদের্শনা অনুয়ায়ী দিনরাত কাজ কর সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।