দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে রাঙামাটি ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধ

0

রাঙামাটি প্রতিনিধি

দীর্ঘ ষাট বছর পর সংস্কার করা হলো রাঙামাটি শহরের ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধ। এখন চলছে বাঁধের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়তে স্থাপন করা হচ্ছে আকর্ষণীয় বিনোদন স্পট।
জানা যায়, রাঙামাটি শহর রক্ষা ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের সংযোগ স্থাপনে ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয় ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধ। কিন্তু নির্মাণের পর দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার করা হয়নি বাঁধটি। ফলে দিনের পর দিন কাপ্তাই হ্রদের ভাঙনের কবলে পড়ে এবং মাটি ধসে যাওয়ায় বাঁধটির মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হতে থাকে। সম্মুখীন হয় হুমকির। বর্ষা এলে বেড়ে যায় ঝুঁকি। সবশেষ ২০১৭ সালের জুনে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে বাঁধটির অস্তিত্ব চরম বিপর্যস্ত হলে সংস্কারের পদক্ষেপ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, রাঙামাটি।
সূত্র জানায়, রাঙামাটি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড় ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিষ্ঠামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) আওতায় বাঁধটি রক্ষার জন্য সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে, যা শেষ হবে চলতি সালের জুনে। প্রকল্পে ৬৬৩ মিটার দৈর্ঘ্যেের বাঁধের একপাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ ও মাটি ভরাট করে স¤প্রসারণ কাজ করা হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে, যাতে বরাদ্দের ২৫২ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঁধের স¤প্রসারিত পাশের অংশে সৌন্দর্য বর্ধনসহ কিছু মনোরম বিনোদন স্পট স্থাপনার কাজ চলছে।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর রাঙামাটি শহরের তিনটি এলাকা রিজার্ভবাজার, তবলছড়ি ও বনরূপাকে ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছিল। কাপ্তাই হ্রদের দুই পাশের মধ্যখানে অবস্থিত কয়েকটি দ্বীপকে একত্রিত করে এই সড়কের সংযোগ স্থাপন করা হয়। দুই পাশের হ্রদের সৌন্দর্যের কারণে এই স্থানটি স্থানীয় দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত এই বাঁধের উজানের পাশ ভাঙতে ভাঙতে রাস্তার তীরবর্তী স্থানে গিয়ে পৌঁছায়। এর আগে যে কোনো মুহূর্তে সড়কটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে সড়ক বিভাগ গাছের খুঁটি দিয়ে আপদকালীন সড়কটি সচল রাখে। অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, রাঙামাটি পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনে উদ্যোগ নিলেও এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পক্ষে বাঁধটি রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি।
২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেসময় জেলাজুড়ে সড়কের ১৫১টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত সেসব সড়ক মেরামত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পাহাড়ধস রোধে ২৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। এই প্রকল্প থেকেই ৬৬৩ মিটার দৈর্ঘ্যেের ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধের সংস্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, রাঙামাটি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড় ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিষ্ঠামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাঁধটি রক্ষায় সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। শেষ হবে সামনে জুনে। প্রকল্পে ৬৬৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে ফিশারি সড়ক সংযোগ বাঁধের একপাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ ও মাটি ভরাট করে স¤প্রসারণ কাজ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রায় ৯৭ শতাংশের কাজ শেষ। বর্তমানে বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির এডিপি (এশিয় ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) খাতে বরাদ্দের ৮৮ লাখ টাকায় সৌন্দর্যবর্ধনসহ কিছু বিনোদন স্পট তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।