মো. মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী
গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ। সময় দুপুর ১২.১৫ মিনিট। স্থান কদমতলী রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং। ট্রেন আসবে তাই রেললাইনের গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমাদের গাড়ি যথারীতি দাঁড়িয়ে যায়। যদিও লেভেল ক্রসিং গেইটের বিপরীত দিক আসা রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা বা গেইট থাকে না। ফলে সি এন জি অটোরিকশা, পা-চালিত ও ব্যাটারি রিক্সা, পা ও মোটর চালিত ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, বাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের কারোই যেন অপেক্ষা করার ফুরসৎ নেই। হাতে যেন সময়ও নেই। পাশাপাশি দেখা যায়, সবার মধ্যে যেন অজানা তাড়া অধৈর্য অসহিষ্ণুতা অস্থিরতা বিরাজমান। এবং যে কোনোভাবেই অতি দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছার প্রাণান্তকর চেষ্টা। বা তাগাদা। এমনকি বিপজ্জনক জেনেও দুই বিপরীত মুখী রাস্তা দিয়ে প্রচুর যানবাহন ঢুকে পড়ে বেষ্টনীর ভেতরে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি মোটামুটিভাবে এই ক্রসিং পেরিয়ে যেতে পারলেও বিপত্তী বাঁধে চট্টগ্রাম স্টেশনে আসা অন্য একটি ট্রেনের ক্ষেত্রে। ট্রেন চলাচলের নিরাপদ বেষ্টনীর ভেতরে বিরাট যানজট বা জটলার কারণে লেভেল ক্রসিংয়ের অনতিদূরে ট্রেনটি থেমে যেতে বাধ্য হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ট্রেন দেখা যাওয়া সত্ত্বেও যানবাহনের চালক যাত্রী এবং পথচারীদের কারোরই টনক নড়েনি। এমনকি দুই দিক থেকে দুই জন ব্যক্তি গাড়ি থামানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করতে খুব হিমশিম খাচ্ছিল। তথাপি জটলা কিছুটা কমে এলে ট্রেনটি হুইসেল দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। দঃখের বিষয়, মাত্র ৫/৭ মিনিট সময় অপেক্ষা করার সেই ধৈর্যটুকু কেউই ধরে রাখতে পারেনি। কি বিচিত্র আমাদের নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। অসচেতনতা অসাবধানতার এবং তাড়াহুড়োর কারণে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে গেছে। প্রায়শই রেলের গেইটম্যানদেরকে এসব অনাকাক্সিক্ষত অনভিপ্রেত দুর্ঘটনার জন্য ঢালাওভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে। অথচ বিবেক বিবেচনা নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত চালক, যানবাহনের যাত্রী এবং পথচারীরাও এসব দুর্ঘটনার জন্যে কোনো অংশে কম দায়ী নয়। এবিষয়ে কারো কোনো বোধোদয় নেই। নেই দায়বদ্ধতাও। সবাই যেন নির্লিপ্ত ও নির্বিকার। শুধুমাত্র জনসচেতনতা নাগরিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনের মাধ্যমে এহেন অনাকাক্সিক্ষত অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
লেখক: আরবান ভিলা, ২২, গুরা মিয়া চৌধুরী লেইন