সরকার ইন্টারনেট, ওষুধ, এলপিগ্যাস, বিস্কুটসহ এমন কিছু পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে যা প্রভাব বাজার ব্যবস্থাকে না ছুঁয়ে যাবে না। ইন্টারনেট, গ্যাস, ওষুধসহ কিছু পণ্য সারাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের পকেট শূন্য করতে যথেষ্ট। ইন্টারনেট, গ্যাস এবং ওষুধ ছাড়া দেশের কোন নাগরিক চলতে পারবে না। গ্যাসের কারণে কলকারখানার উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে সংশ্লিষ্ট যে সকল পণ্য রয়েছে সেগুলোর দাম ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের উপর। অনেক দরিদ্র মানুষ ওষুধ খেতে না পেরে অকাল মৃত্যুর সম্মুখিন হবে। বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বাড়ার কারণে অনেকগুলো পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ সরকারের বিরূপ সমালোচনায় মুখর হয়েছে। ভ্যাটবৃদ্ধির প্রতিবাদ মুখরও হয়েছে সকল মহল। অনেকে রমজান আসার পূর্বে প্রায় শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধিকে সরকারের ভেতর ঘাপ্টিমেরে থাকা স্বৈরাচারের দোষরদের অপকর্ম বলে আখ্যায়িত করছে। সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষ কোন অবস্থাতে সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে মানতে নারাজ। জাতীয় অর্থনীতির ঘাটতি মেঠাতে অন্য বহু কৌশল আছে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের দাতা সংস্থার ছাপ কমানোর বিকল্প কৌশল খুঁজতে হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে মুঠোফোন-ইন্টারনেট, ওষুধ, এলপি গ্যাস, মিষ্টি, বিস্কুটসহ শতাধিক পণ্যের ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মানুষের এমনিতেই নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি নিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, সেখানে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করছে। তাই এ অধ্যাদেশ বাতিল অথবা আগামী রমজান পর্যন্ত এ অধ্যাদেশ কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া রাজনৈতিক দল ও বহু সংগঠন বিবৃতি প্রচার মাধ্যম কর ভ্যাটবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ক্যাবও প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক আবু মোশাররফ রাসেল, দক্ষিণ জেলা প্রেসিডিন্ট আলহাজ আবদুল মান্নান, যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখবিবৃতে সাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ডিসেম্বরে ১৩ শতাংশের কাছাকাছি এবং তার আগের মাসে ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি ছিল। মূল্যবৃদ্ধির চাপে জীবন-জীবিকা নির্বাহে মানুষ দিশাহারা। এর মধ্যেই ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতিকে আরেক দফা উসকে দিতে পারে।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামী মার্চে পবিত্র রমজান উপলক্ষে এখন থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো ও মজুত করা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমলেও বাড়ছে চালের দাম। প্রকার ভেদে চাল কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এ সময়ে ভ্যাটবৃদ্ধি করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়াতে পারেন। এতে রমজান মাসে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকার ইতিপূর্বে ২৯টি পণ্যের ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করলেও ভোক্তা পর্যায়ে কোন প্রতিফলন আসেনি। শুল্ক প্রত্যাহারের পুরো সুবিধাটুকু বড় বড় করপোরেট গ্রুপ ও আমদানিকারকরা হাতিয়ে নেন। মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখি থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। যেহেতু আয় বাড়েনি, সে কারণে পরিবারের পুষ্টিসহ অনেক প্রয়োজন কাটছাঁট করতে পারলেও পরিবারের চিকিৎসা খরচ উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। আবার জীবন রক্ষাকারী ওষুধ কিনতে প্রতি মাসেই বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। ওষুধের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেই ওষুধের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। যা নতুন বছরে সাধারণ মানুষের জন্য ‘ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
তাই সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান ভ্যাট নেটের আওতা বাড়ানো, সহজীকরণ করা, কর ফাঁকি বন্ধ করা, এনবিআরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগ বিবেচনা করা প্রয়োজন। একই সাথে পরোক্ষ করবৃদ্ধি করে নিম্ন আয়ের মানুষের দরিদ্রসীমার নিচে নেমে যাওয়া রোধে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া দরকার। কর প্রশাসনে সংস্কার ও কর ফাঁকির বিষয়টি বন্ধ করে অবিলম্বে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানান ক্যাব নেতৃবৃন্দ। ক্যাবের বক্তব্য যুক্তিযুক্ত। সাধারণ মানুষকে দরিদ্রসীমার আরো নিচে নামানোর সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা জরুরি মনে করে দেশের সর্বস্তরের নাগরিক।