দুর্ভাগা জাতি এবং স্বাধীনতা বিতর্ক

1

আ, জ, ম, সামশুল হক

পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরূদ্ধে তৎপর ছিলেন — তৎকালীন নেতা সর্বজনাব শেরে বাংলা, এ, কে, ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান এবং আরো অনেকে। এক পর্যায়ে তাঁরা স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে ঐক্যমত পোষণ করেন। ঢিমে তালে আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ৬দফা শেখ মুজিবের অনন্য ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে বাঙালিরা মূল নেতৃত্বে শেখ মুজিবকে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সোচ্চার হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের দুঃশাসন এবং বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব ছিলেন অনড় অবস্থানে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেননি। তৎপরবর্তী শেখ মুজিবের নির্দেশনায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে আসে। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। বলাবাহুল্য, ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মরহুম হোসেন শহীদ সোহরওয়ার্দীর মৃত্যু বার্ষিকীতে আলোচনা সভায় শেখ মুজিবুর রহমান এ অঞ্চলের নাম রাখেন বাংলাদেশ। গণভ্যুত্থানের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ে।
১৯৭০ সালের পাকিস্তান নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নের্তৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ট আসন পেয়েও সংসদে বসতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরওয়ার্দী উদ্যানে ( রেসকোর্স ময়দান) লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। কৃষক -শ্রমিক মেহনতী মানুষ, ছাত্র- জনতা স্বাধীনতার পক্ষে একাকার হয়ে ‘ জয় বাংলা’ শ্লোগানে পুরো ঢাকা প্রকম্পিত করে তোলে এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারই জের ধরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নির্বিচারে গুলি চালায়। সেই ইতিহাস কারো অজানা নয়। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিসেনারা সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরে এক পর্যায়ে জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা সারেন্ডার করতে বাধ্য হয়। আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। লাল-সবুজের পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে স্থান পায়। ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। উল্লেখ থাকে যে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী থাকার কারণে যুদ্ধে নের্তৃত্ব দেন, মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সহ জাতীয় ৪ নেতা। এই যুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। বলাবাহুল্য, জামাতে ইসলামী, মুসলিম লীগ এবং পিডিপি প্রকাশ্যে স্বাধীনতার বিপক্ষে হিংস্রতা প্রদর্শন করেছিল। যা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।
আজ সেই দেশ এবং স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং তাও ৫৩ বছর পরে। পাকিস্তানের দোসর তথা পরাজিত শক্তি আজ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বিজয়ী জনতা যে শব্দটি ঘৃণাভরে ব্যক্ত করেনি, সেই রাজাকার শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে, উচ্ছ¡সিত হয়ে এবং সগৌরবে। সত্যিকার অর্থে দেশ আজ কঠিন সত্যের মুখোমুখি। গৌরবোজ্জ্বল বাংলা দেশের ইতিহাস লেপন
করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নাটকের শেষ নেই। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য মতে, “৫আগষ্ট বাংলাদেশের ২ য় স্বাধীনতা। ছাত্রদের চাওয়া-পাওয়ার সাথে মিল রেখে কাজ করতে হবে “। আমাদের প্রত্যাশা,
আপনি ১৮ কোটি মানুষের জন্য কাজ করবেন। ডাঃ শফিকুর রহমান সাহেব বলেছেন, “ জামাতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেনি। তবে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল”। তাঁর এই বক্তব্যের জন্য মোবারক বাদ জানাই এই মর্মে, তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তাছাড়া সেই সময় তিনি জামাতে ইসলামীর সাথে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ছিলেননা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি এবং তাদের দোসরদের এই বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্থান হবেনা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হবে স্বপ্নের মতো। বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি এবং টাকা পাচার হয়েছে সত্যি।তাদের অবশ্যই বাংলার মাটিতে বিচার হবেই হবে। এই দায়ভার মরহুম শেখ মুজিবকে কেন্দ্রীভূত করার কারণ কি? তা কোনভাবে সমর্থনযোগ্য নন। কেননা, বঙ্গবন্ধুকে পার্টি প্রধান না ভাবে বাংলাদেশের রূপকার এবং জাতীয় সম্পদ হিসেবে মর্যাদার আসনে রাখা জাতির জন্য কল্যাণকর
দুইজনের মধ্যে কথা হচ্ছে, একজন আমার পরিচিত। আমি তাদের সাথে সামিল হলাম। প্রথমজন সদ্য কলেজ পাশ করা এক ছেলে।দ্বিতীয়জন স্বাধীনের পরে জন্ম। আমি যুক্ত হওয়াতে তিন প্রজন্মের লোক বলা চলে। প্রথমজনকে থামানো যাচ্ছেনা,অনর্গল বলে যাচ্ছে।১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়নি, দেশ ভাগ হয়েছে। শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দেননি,তিনি যুদ্ধের সময় পাকিস্তান ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষক অন্যজন। যুদ্ধে ৩০ লক্ষ লোক মারা যায়নি। শেখ হাসিনা তাঁর বাপের মত পালাইছে। দ্বিতীয়জন চেষ্টা করছে উত্তর দেওয়ার জন্য। আমি নিরবতা পালন করে চলে এলাম। বলতে গেলে, দেশটা গুটি কতেক ছেলেদের হাতে জিম্মি। বিএনপি সহ কয়েকটি দল নির্বাচনের কথা বললেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনভাবেই আমলে নিচ্ছেননা। সংস্কারের দোহাই দিয়ে কালক্ষেপণ করে চলেছেন।দেশের মানুষ এবং পরিস্থিতির দিকে নজর না দিয়ে রাষ্টীয় সংস্কারে মনযোগী হয়েছেন। রোডম্যাপসহ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত নেই বলা চলে।এসবের জন্য রাজনৈতিক নিরবতাকে দায়ী করছেন জনগণ। ক্ষমতার লোভ কম-বেশি সবার মধ্যে আছে। বড় দলের এক বড় নেতা, সবার কাছে গ্রহণ যোগ্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের স্পষ্ট মনে আছে, তিনি ০৩/৮/২০২৪ তারিখে বলেছিলেন, “ আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছি।দলীয় কর্মীদের বলবো, তোমরা ছাত্রদের সাথে কাজ করতে নেমে পরো”। তাঁর সেই বক্তব্য বুমেরাং হয়েছে। সম্ভবতঃ আজ হয়ত অনুশোচনা করছেন।

লেখক : প্রাবন্ধিক