নিজস্ব প্রতিবেদক
অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিদর্শন করেছেন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। তিন সদস্যের এ প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথেও কথা বলেন তদন্ত টিম। ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত চট্টগ্রাম ওয়াসার অনিয়ম তদন্তে’ এ টিম চট্টগ্রামে আসলেও শুধু ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহর কার্যালয়ে গিয়েই তদন্ত কাজ শেষ করেছেন।
পরে গণমাধ্যম কর্মীদের এলজিডি মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা এখান থেকে (চট্টগ্রাম ওয়াসা) সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছি। তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন করবো। এরপর আমরা যতদ্রæত সম্ভব প্রতিবেদন সরকারের কাছে সাবমিট করবো। এর আগেও অনিয়ম নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কমিটি আগে কখনও আসেনি। সরকার আগে কখনও তদন্ত করেছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্তকে ‘লোক দেখানো সফর’ বলে মন্তব্য করেছে ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
‘মন্ত্রণালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে’ এমন তদন্তে বিস্ময় প্রকাশ করে ক্যাব সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, তদন্ত টিম কি ধরনের তদন্ত করেছেন সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার কাছ থেকে কি তথ্য যাচাই করবেন? গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে তদন্ত করতে আসলে গণমাধ্যম থেকে কি তথ্য নিয়েছেন বা স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে কি তথ্য নিয়েছেন?এদিকে গতকাল ক্যাব থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত আছে আওয়ামী সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে। চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি বিগত সরকার আমলে ৮ দফায় ১৬ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নিয়োজিত। ১৬ বছর স্বৈরশাসকের পক্ষ অবলম্বন করে অনিয়ম দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে ওয়াসাকে। এ সময়ের মধ্যে ১৪ বারের বেশি পানির দাম বাড়িয়ে চট্টগ্রামবাসীর উপর বোঝা চাপিয়েছেন। এখনও শহরের এক তৃতীয়ংশ মানুষ পানি বঞ্চিত রয়েছে। ওয়াসার বাস্তবায়ন করা ও চলমান প্রতিটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি নিজের মেয়ের প্রতিষ্ঠানকে সুয়্যারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন।
এতে বলা হয়, এমডি ফজলুল্লাহকে চেয়ারে বসিয়ে রেখে তার দুর্নীতির তদন্ত হয় না। তার অধীনে থেকে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দিবে না। অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আগে তাকে পদ থেকে সরাতে হবে। পদ ছাড়লে তখনই সুষ্ঠুু তদন্ত সম্ভব। তখনই সকল অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্যাব সব সময় ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন। যেখানে ভোক্তার অধিকার ক্ষুণœ হয়, সেখানে প্রতিবাদ করে আসছে। এরই ধারাবাহিতায় চট্টগ্রাম ওয়াসায় ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণœ হওয়া নানা বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে। ক্যাব মনে করে, চট্টগ্রাম ওয়াসাতে সংস্কার প্রয়োজন। এমডি অপসারণের মাধ্যমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতি যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনি চট্টগ্রাম ওয়াসা গ্রাহকবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপ পাবে।