দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়িত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও আউটার রিং রোড প্রকল্পে দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রথমবারের মতো সিডিএ কার্যালয়ে দুদকের টিম অভিযান চালায়। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত চলা অভিযানে দুই প্রকল্পের বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।
দুদকের কাছে লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত র‌্যাম্প, রেলিং ও নাট-বল্টু ঠিকমতো না লাগানো ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, আউটার রিং রোড প্রকল্পে সিডিএর আটজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে অতিরিক্ত ভাতা নিচ্ছেন বলে অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, উক্ত কর্মকর্তারা সিডিএ থেকে বেতন নেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প থেকে বেতনের ৪০ শতাংশ ভাতা সংগ্রহ করছেন, যা সরকারি বিধিমালার মানে অনুপস্থিত। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলে মূল বেতনের মাত্র ১০ শতাংশ বা দেড় হাজার টাকা পান। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মাহমুদ ইমরান। তিনি জানান, আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে সিডিএতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ মূলত দুটি প্রকল্পে – একটি হলো লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যেখানে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল, অতিরিক্ত র‌্যাম্প এবং রেলিং-এ নাট-বল্টু ঠিকমতো লাগানো হয়নি; অপরটি হলো চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে সিডিএর আটজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে অতিরিক্ত ভাতা নিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলে যে ভাতা দেওয়ার কথা, তা ১০ শতাংশের বেশী হওয়া উচিত নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এখানে এসেছি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে নেওয়া ১৩টি প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা তদন্তে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই ১৩টি প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ছয়টি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, আর সাতটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৪,২৯৮.৯৫ কোটি টাকায় নগরীর পতেঙ্গা থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে। তবে প্রকল্পের আওতায় ২৪টি লুপ ও ১৪টি র্যাম্প নির্মাণের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হলে বাণিজ্যিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। অপরদিকে, ২,৬৭৫ কোটি টাকায় নগরীর পতেঙ্গা থেকে টানেলের প্রান্ত থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সাগরতীর ধরে নির্মাণ করা আউটার রিং রোড, ১৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ, চার লেনের ৮৪ ফুট চওড়া রোডটি ২০২০ সাল থেকে কার্যক্রমে রয়েছে।