‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম। গতকাল মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি শিক্ষা বোর্ডের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়ে নানা কথা বলেন।
প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে গত ৮ মাস সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। কোন ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে আমার বড় অর্জন; সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের মত একজন দুর্নীতিবাজ ও অসৎ কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনতে পেরেছি। তিনি বলেন, নারায়ণ চন্দ্র নাথ সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও অদৃশ্য কারণে তিনি পার পেয়ে যেতেন। সর্বশেষ জালিয়াতির মাধ্যমে ছেলেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছি। জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ২০২৩ সালে সচিব থাকাকালে নারায়ণের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ৯ জুলাই তাকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়।
নারায়ণের বিরুদ্ধে তদন্ত করার পর থেকে রেজাউলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে শুধু নারায়ণের ছেলের ফল জালিয়াতি নয়, আরও অন্তত ১৭ জনের ফল জালিয়াতির বিষয়ে আমরা তদন্ত করেছি। এগুলোার বিচারও করেছি। এসব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানা চাপ সহ্য করতে হয়েছে। তাই সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ওই অংশটি আমাকে শেখ হাসিনার দোসর বলে শিক্ষাবোর্ড থেকে নামাতে চেয়েছিল। এখনও তারা সেটি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, আমি ৮ মাসে সাহসের সঙ্গে ওই জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এমন কি স¤প্রতি পাঁচলাইশ থানায়ও মামলা করেছি। আমার মধ্যে সৎ সাহস আছে। কেউ এক টাকার দুর্নীতির প্রমাণও দিতে পারবে না। তবে, নারায়ণের পক্ষ আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করতে ব্যস্ত।
গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শৃঙ্খলা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের সই করা নির্দেশনায় বলা হয়, তদন্তে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য নারায়ণের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী মামলাসহ শাস্তিম‚লক ব্যবস্থা নেওয়া ও নক্ষত্রের ফল বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর ২৩ সেপ্টেম্বর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে নারায়ণ চন্দ্র নাথকে।
নারী সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, আমি একজন বোর্ডের চেয়ারম্যান। নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। গত সোমবার একটি মিটিংয়ে ছিলাম। ওইসময় ওই নারী সাংবাদিক আমার অফিস কক্ষে ঢুকেন। তিনি কিছু বিষয়ে আমার বক্তব্য জানতে চান। আমি বলেছি, আপনি কিছুক্ষণ পরে আসুন। তিনি তখনই বক্তব্য দিতে বলেন। বক্তব্য না নিয়ে যাবেন না বলে জানান।
তিনি বলেন বলেন, সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী কাজ করে তিনি ওই পোর্টালে লিখেন আমি লাঞ্ছিত করেছি। এখানে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। অফিস সহকারীরা আছে। আপনারা একটু যাচাই করুন। আমার যদি কোন দোষ খুঁজে পান, তাহলে আমার বিরুদ্ধে লিখুন, আমি খুশি মনে মেনে নিব।