দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পারাপা

1

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নের দক্ষিণ ব্রাহ্মণ ডেঙ্গা ছড়ার উপর নির্মিত সেতুটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিগত ২২ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু খালের প্রস্থের তুলনায় সেতুটি ছিল খুব ছোট। যে কারণে পানির তোড়ে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়। জোয়ার-ভাটা আর বর্ষার পানিতে সেতুর দু’পাশের মাটিও সরে যায়। এতে বিলীন হয় সংযোগ সড়ক। এক পর্যায়ে মূল সেতুর পিলারেও ফাটল ধরে। যা এখন যানবাহন তো দূরে থাক, পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা ঝুঁকিপূর্ণ।
সাংগু নদী থেকে আসা জোয়ার ভাটার পানি আর বৃষ্টির কারণে সেতুটি দুইপাশ ৩-৪ ফুট মাটির নিচে দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। দুই পাশের সংযোগ সড়ক থেকে সেতুটি সম্পূর্র্ণ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছেন।

উপজেলার চরতী ইউনিয়নের দক্ষিণ ব্রাহ্মণ ডেঙ্গা ছড়ার হেলে পড়া সেতুর দুপাশের জনগণ বাঁশ ও কাঠের তক্তা দিয়ে সংযোগ সেতু তৈরি করে দিয়েছেন। এখন সেটিও নডবড়ে হয়ে গেছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের চলাচল করে থাকেন।
চরতী ও দ্বীপ চরতী এলাকার সাধারণ মানুষ এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিশেষ করে হাটের দিন কয়েক হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করে থাকেন। অনেক শিশুরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ প্রয়োজনীয় আসা যাওয়ায় সেতু পার হওয়ার সময় ঝুঁকির মুখে পড়ে।
সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডি সেতুটি নির্মাণ করার পর আর কোন খোঁজ খবর নেয়নি এ পর্যন্ত। তারপরও জনসাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছেন।
জানা গেছে, বিগত ২২ বছর আগে দক্ষিণ ব্রাহ্মণ ডেঙ্গা ছড়ার উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ওই সেতু দিয়ে ছোট বড় যানবাহন পারাপার হলেও বিগত দুই বছর যাবৎ যানবাহন চলাচল বন্ধ।
৫ মে সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হেলে পড়া সেতুটি পুর্বপাশে ৩-৪ ফুট মাটির নিচে দেবে গিয়ে হেলে গেছে। সেতুর পশ্চিম পাশে ১০ ফুট ও পুর্ব পাশে ৬ ফুট মাটি সরে গিয়ে সংযোগ সড়ক থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার লোকজন ধসে যাওয়া সেতুর সাথে কাঠের তক্তা দিয়ে সংযোগ সড়ক তৈরি করে যাতায়াত করছেন। বিগত দুই বছরের মেরামতের অভাবে তাও জীর্ণ অবস্থা। এ অবস্থায় ঘটে যেতে পারে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দক্ষিণ ব্রাহ্মণ ডেঙ্গা ছড়ার ওপরের সেতু দিয়ে বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন রকমের গাড়ি চলাচল করতো। আর সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করেন। সেতুটি অকেজো হওয়ার পর হতে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হাটে বেচাকেনা করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
চরতী এলাকার দক্ষিণ ব্রাহ্মণ ডেঙ্গা এলাকার বয়োবৃদ্ধ হাফেজ আহমদ, মিলন তালুকদার, রত্না দাস, মোহাম্মদ সোলেমান, সুকুমার দাস জানান, এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন কিন্ডার গার্ডেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি স্কুল ও কলেজের প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুততম সময়ে সেতুটি সংস্কাােরর জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
চরতী ইউনিয়নের ঈন্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিয়া আমিন রাইসা, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফিজ আল রাফসান, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদৃতা দাশ, নুসরাত জাহান, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অঙ্কিতা দাশ গুপ্ত, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমন তালুকদার, চরতী দীঘির পাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনন্যা দাশ গুপ্তা, চরতী মুহাম্মদীয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো.পারভেজসহ অনেকে জানান, সেতুটি ধসে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারলেও বর্ষাকালে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পাওে না। খুব তাড়াতাড়ি সেতু সংস্কারের দাবি জানান শিশু শিক্ষার্থীরাও।
উপজেলার চরতী ইউনিয়নের সমাজসেবক ইন্দ্রজিত দাশ গুপ্ত জানান, সেতুটি পুনঃনির্মাণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে।
চরতী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরী সেতুটির করুণ অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, গত বছর সেতুটির দুই পাশে সরে যাওয়া মাটির জায়গায় মাটির বস্তা দিয়ে কোন প্রকারে জনগণের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছিলাম, পরে বন্যায় তাও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে- এর সাথে যোগাযোগ করা হলে কালভার্টের পুনঃনির্মাণের একটি দরখাস্ত প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কালভার্টটি যতদূর সম্ভব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস(পিআইও)হতে নির্মাণ করা হয়েছিল। উপজেলায় এখন নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যাগে নেয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পগুলোতে কালাভার্টটি অন্তর্ভুক্ত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস উক্ত কালভার্টের পুনঃনির্মাণের একটি দরখাস্ত প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খুব শীঘ্রই জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে কালভার্টের দুই পাশে কাঠের তক্তা বা প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মেরামত করে দেয়া হবে। যাতে সাধারণ লোকজন যাতায়াত করতে পারে। পরবর্তীতে উপজেলায় এখন নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যাগে নেয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পগুলোতে কালাভার্টটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।