দুর্গা প্রতিমা গড়লো ১২ বছরের দীপ্ত

1

আবীর চক্রবর্তী

বয়স এখনও ১২ এর ঘরে। এটুকুন বয়সে নগরের জেএম সেন স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র দীপ্ত ভট্টাচার্য নিজ হাতে গড়েছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। শুধু দুর্গা নন, আছেন লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ঠাকুর, মহিষাসুর ও সিংহ। পাটাতনসহ প্রতিমাগুলোর গড় উচ্চতা ১৬ ইঞ্চি।
শারদীয় দুর্গাপূজায় মন্ডপে বৃহৎ আকারের প্রতিমার পাশাপাশি প্রয়োজন হয় ছোট আকারের প্রতিমাও। গত ২০ দিন ধরে ঘরের এক কোণে বসে মনের আনন্দে এসব প্রতিমা তৈরি করে দীপ্ত এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার প্রশংসায় ভাসছে।
দীপ্ত থাকে নগরের আলকরণ দোভাষ কলোনিতে। বাবা অরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী, মা বৈশাখী ভট্টাচার্য্য গৃহিণী। ৯ অক্টোবর দুর্গাপূজার ষষ্ঠী তিথিতে পাড়ার মা ভবতারিণী মন্দির প্রাঙ্গণে স্থাপিত পূজামন্ডপে যায় তার প্রতিমাগুলো। তাই বেশ খুশি এই ক্ষুদে শিল্পী।
দীপ্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছে, খড়, কাঠের টুকরো আর সুতা দিয়ে প্রথমে মূর্তির আকার দেওয়া হয়। এরপর দেওয়া হয় মাটির প্রলেপ। আলাদা করে বানানো হয় মাথার তাজ, মুখ, হাত ও পায়ের পাতা। পরে সেগুলো জোড়া দেওয়া হয় মূর্তির সঙ্গে। পুরো প্রতিমা তৈরি হয়ে গেলে রোদে শুকোনো হয়। তুলি দিয়ে প্রথমে সবগুলোতে সাদা রং করে আবারও রোদে রাখা হয়। শুকিয়ে গেলে দেওয়া হয় লাল, নীল, হলুদ, সবুজ সহ বিভিন্ন রং। এই রং দিয়ে পোশাকও এঁকেছি। তারপরেই আঁকা হয় প্রতিমার চোখ।
তবে যত সহজে লিখে ফেলা গেল, কাজটি মোটেই তত সহজ নয়। এ কথা বললেন দীপ্ত’র প্রতিবেশি শুভঙ্কর চক্রবর্তী। তিনি জানান, এই বয়সে তার কাজের প্রতি একাগ্রতা সবাইকে অবাক করেছে। দীপ্ত কার্টুনে মজে না থেকে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে নিজ ধর্মের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে এই প্রতিমা গড়েছে। তার গড়া প্রতিমা মন্ডপে পূজার্থীদের পুষ্পার্ঘে সিক্ত হবে।
দীপ্ত’র মা বৈশাখী ভট্টাচার্য্য জানালেন, মায়ের পূজার সময় প্রতিমা বানাবে- এমন ইচ্ছে ছেলের আগে থেকেই ছিল। এর আগেও সে স্কুল থেকে এসে অবসর সময়ে গণেশ ঠাকুরের প্রতিমা ও মা কালীর প্রতিমা বানিয়েছিল। তার আগ্রহ দেখে উৎসাহ দিয়েছি। প্রতিমা সাজানোর জন্য রং-তুলি কিনে দিয়েছি। এবার দুর্গাপূজায় মন্ডপের বেদিতে ছেলের তৈরি করা প্রতিমা রাখা হচ্ছে। এটা মায়ের কৃপা।
শাস্ত্রবিদ পন্ডিত অমল চক্রবর্তীর মতে, প্রতিমার আকার যাই হোক না কেন তাঁর গরিমা এবং মহিমা প্রকাশিত হয় বস্তুতঃ উপাসকের শুদ্ধতা-পবিত্রতা এবং পূজার্চনার আকুতিকে কেন্দ্র করে। বড় মন্ডপে বেদিতে ছোট প্রতিমা স্থাপন করা হয় মূলত বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
দীপ্ত’র বাবা অরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ছেলেটা মায়ের ভক্ত। এখন স্কুল বন্ধ, এই সময়ে সে প্রতিমা বানিয়েছে তার কাঁচা হাতে। তার এসব কীর্তি দেখতে ভালোই লাগে।
দীপ্ত ভট্টাচার্য জানায়, পাড়ার এক বন্ধুকে তার কাজের সহকারী হিসেবে রেখেছিল। সে প্রতিমার অস্ত্রগুলো বানাতে সাহায্য করেছে। মামার বাড়ি স›দ্বীপ, বাবার বাড়ি পটিয়ার কেলিশহরে খুব বেশি যাওয়া না হলেও শহরের বিভিন্ন মন্ডপে বড় প্রতিমাগুলো দেখেছে। বাসায় মোবাইলে ইউটিউবে দেখেছে প্রতিমা বানানোর প্রক্রিয়া। এভাবেই ধীরে ধীরে প্রতিমা তৈরিতে তার আগ্রহ জন্মায়। এরপর সরস্বতী মায়ের প্রতিমা তৈরি করতে চায়।
পূজামন্ডপে নিজের তৈরি প্রতিমার কাছে কি প্রার্থনা করবে-এমন প্রশ্নে দীপ্ত বললো, মা দুর্গার ডান দিকে দেবী লক্ষী ও শ্রীগণেশ, বাম দিকে শ্রীকার্তিক ও দেবী সরস্বতীর প্রতিমা বসাবো। আমি মায়ের কাছে বিদ্যা চাইবো, বলবো:
যা দেবী সর্বভূতেষু বিদ্যারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ। ।