চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতায় হতাহতদের ঘটনা অত্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। খাগড়াছড়িতে সহিংসতার পর পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানেও অশান্ত বিরাজ করছে। সাজেকে আটকা পড়েছে দেড় হাজার পর্যটক। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রধান ধর্মীয় উৎসব আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিমা তৈরির স্থান, মন্ডপে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময়, পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা ও বিসর্জন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। দুর্গাপূজা নিয়ে কোন ধরণের গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ বিসর্জনস্থনে পর্যাপ্ত আলোকায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র আযান ও নামাজের সময় পূজা মন্ডপে উচ্চস্বরে বাদ্য-বাজনা না বাজালে সম্প্রীতি অটুট থাকবে। পূজা চলাকালীন সময়ে যাতে সকলের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় সে ব্যাপারে মসজিদে নামাজ পরবর্তী বয়ানের ঈমামগণ আগত মুসল্লীদের উদ্বুদ্ধ করবেন। গতকাল ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা ও বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর পর একই ভেন্যুতে বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকগণের মাসিক সমন্বয় সভা বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
মনসুরাবাদস্থ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে সেবাপ্রার্থীরা নিয়মিত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সমন্বয় সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাসপোর্ট অফিসের যাতে দুর্নাম না হয়, সেবা নিতে গিয়ে কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে ও কেউ যাতে কোন ধরণের সুবিধা আদায় করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মাঝে মাঝে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সাথে লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের অবস্থা দেখার জন্য মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলামকে তাগাদা দেন তিনি।
সমন্বয় সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে বিগত দুই মাসের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন কতটুকু তা যথাসময়ে প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ করতে হবে। পাহাড় কাটা রোধসহ নদ-নদীগুলোর দখল, দুষণরোধসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সিডিএ’র কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, কোন বিল্ডিং, মার্কেট ও শপিং মলের জন্য গাড়ি পার্কিং সুবিধা ছাড়া সিডিএ প্ল্যান অনুমোদন করা যাবে না। সরকারি-বেসরকারি পাহাড় ও টিলা শ্রেণির জায়গায় আবাসিক ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়া যাবেনা। এছাড়া যে সকল আবাসিক ভবনের পার্কিং প্লেস মার্কেট ও ফুড কোড বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর তালিকা করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এসব স্থাপনার তালিকা পাওয়ার পর সংশ্রিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো ক্রমান্বয়ে সংস্থারসহ অফিস ও অফিসিয়াল কার্যক্রমে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার না করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার রায়, সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল মান্নান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম (চট্টগ্রাম), মো.আমিরুল কায়ছার (কুমিল্লা), মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (কক্সবাজার), মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন (চাঁদপুর), মোহাম্মদ দিদারুল আলম (ব্রাহ্মণবাড়িয়া),শাহ মোজাহিদ উদ্দিন (বান্দরবান), রাজীব কুমার সরকার (লক্ষীপুর), মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার (ফেনী), বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিম, এফবিসিসিআই’র সদস্য মাহফুজুল হক শাহ প্রমুখ। গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রধান প্রকৌশলী, বিসিক’র আঞ্চলিক পরিচালক মো.মোতাহার হোসেন, সওজ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান, সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় সমাজসেবা পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম, বিভাগীয় ইমমিগ্রশন ও পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আহসান, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. হাছান হাছিবুর রহমান,পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা, গ্রিড সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপস কুমার ভৌমিক, চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক মাহমুদ, সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ মঈনুদ্দিন, পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন, বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জলশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র কুমার চাকমা, বিভাগীয় পরিসংখ্যান কর্মকর্তা বিনয় দেবনাথ প্রমুখ। পৃথক সভাগুলোতে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, র্যাব-পুলিশ-কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।-বিজ্ঞপ্তি