নেছার আহমেদ খান
নারী জাতি আমাদের সম্মানিত মা, আমাদের বোন এই সমাজের তাঁরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সচ্ছলতা ফেরতে গৃহকর্মীর ভিসায় গত এক দশকের মধ্যপ্রাচ্য পাড়ি দিয়েছেন ৪-৫ লাখের অধিক বাঙালি নারী। কিন্তু এ-ই নারীদের বেশির ভাগেরই ভাগ্যের পরিবর্তন তো হয়নি, উল্টো যৌন ও শারীরিক নির্যাতন। দুবাই ও সৌদি নাগরিকদের নির্যাতন সইতে না পেরে আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়ছেন হতভাগ্যের কেউ। সবাই উন্নত জীবনের আশায় গত এক দশকে মধ্যপ্রাচ্য পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশি নারী। তাদের হিংসভাগই গেছেন গৃহকর্মীর ভিসায়। ভাগ্যের সন্ধানে যাওয়া এসব নারী পদে পদে শিকার হন। শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সেখানে সাধারণ ঘটনা। টানা কাজ করার পরও ঠিকমত বেতন পান না নারীদের কেউ কেউ। মধ্যপ্রাচ্য যাওয়া নারীদের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে নিগৃহীত হয়ে বাংলাদেশ ফিরে এসেছেন কমপক্ষে কয়েক হাজার নারী। এ পর্যন্ত নির্যাতন আত্মহত্যা সহ নানান কারনে মধ্যে প্রাচ্য মরা গেছেন কমপক্ষে কয়েকশত। উন্নত জীবন লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জায়গায় থেকে হতদরিদ্র নারীকে গৃহকর্মীর ভিসায় দুবাই ও সৌদি আরবের নিতে আকৃষ্ট করে মানব পাচারকারী রিত্রুুটিং এজেন্সি ও বড় বড় দালাল চক্র। গৃহকর্মীর ভিসায় নিয়ে যাওয়ার কয়েক হাত ঘুরে তিন-চারবার দুবাই ও সৌদি আরবের বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশি নারী এ-ই সব অসহায় নারী শ্রমিকদের। নারীদের এজেন্সি থেকে কপিল থেকে আবারও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় সৌদি নাগরিকদের কাছে বিক্রি করার পর শুরু হল অমানুষিক নির্যাতন। তাদের উপর চলানো হয় যৌন ও শারীরিক নির্যাতন। সমান তালে চলে শারীরিক নির্যাতন। দেওয়া হয় না প্রতি মাসের বেতন। বেতন চাইলেও অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন। এমনকি কাউকে কাউকে কারাগারে পাঠানোর নজির হয়েছে। বাংলাদেশি নারী কর্মীদের বেশির ভাগ দুবাই ও সৌদি আরবের নাগরিকদের আচরণ রুঢ়। তাই পৃথিবীর মুসলিম কোনো দে-শ ই দুবাই ও সৌদিতে গৃহকর্মী হিসেবে নারীদের পাঠাতে খুব রাজি হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ নারীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখাইয়ে এখানে আনা হয়। কাজে যোগদানের পর শুরু হয় বাংলাদেশি নারীদের শারীরিক ও যৌন নির্যাতন। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে তারা ভাষাগত সমস্যা কারণে আইনের প্রতিকার পায় না পুলিশের কাছে। রিক্রুটিং এজেন্সিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া ও নিয়োগকর্তা সৌদি আরবের কোনো জবাবদিহি না থাকায়, দেশটিতে বাংলাদেশি নারীদের ওপর নির্যাতন বেড়েই চলছে।
আমরা যদি ২০ বিশ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কে বছরের পর বছর খাওয়া দাওয়া বাংলাদেশে মাটিতে থাকার সুব্যবস্থা করতে পারি তাহলে আমার বাংলাদেশি নারী জাতিকে বাংলাদেশে চাকুরী ব্যবস্তা করতে পারব না। আমাদের বাংলাদেশ সরকারকে বলব মধ্যপ্রাচ্যে যেন আর বাংলাদেশি গৃহকর্মী না পাঠানো হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন হল মধ্যপ্রাচ্যে দে-শ সমুহ গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশি নারী যাওয়াটা বন্ধ করা হোক। আসুন নারী সমাজ কে সন্মান করি। এই সমাজ ও দেশে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
লেখক : সমাজকর্মী, প্রাবন্ধিক