নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে রাজধানীর দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত পড়েছে। এমন অবস্থায় পণ্যবাহী যান চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও টানা ১০ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বলতে গেলে খামারিদের দুধ রাজধানীতে আসছেই না। ছিটেফোঁটা যাও আসে, মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় সেটুকু বেচতেও ক্রেতার অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ করতে হয় ব্যবসায়ীদের।
গতকাল শুক্রবার বিকালে পুরান ঢাকার রথখোলায় দুধের আড়ৎগুলোতে দেখা গেছে বড় বড় বালতি-গামলা, প্লাস্টিকের খালি ড্রাম পড়ে আছে। রাজধানীর আশপাশ থেকে ছোট খামার থেকে আসা দুই-তিনটি ড্রাম ভর্তি দুধ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন বিক্রেতারা। সেখানে দেড় ঘণ্টায় মাত্র চারজন খুচরা ক্রেতাকে দেখা গেছে।
অথচ ১৩-১৪ দিন আগেও সকাল-বিকাল ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব থাকত রথখোলা। আড়তের সামনেই ছোট পিকআপ ও রিকশাভ্যান থেকে নামত দুধভর্তি ড্রাম।
রথখোলা দুগ্ধ আড়তের ব্যবসায়ী সেলিম পারভেজ বলেন, ‘দুধের বাজারে আকাল পড়েছে, শনি লেগেছে। করোনার কারণে খামারিদের দুধ আসছে না, যেটুকু আসছে তা আবার বিক্রিও করতে পারছি না। বসে আছি সকাল থেকে’। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপের আগে প্রতিদিন এই আড়তে একশ মণের বেশি দুধ বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে গড়পড়তায় দুই-তিন মণ।
লালজি ঘোষের আড়তের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শহরের সব মিষ্টির দোকান বন্ধ, বিয়েশাদি বন্ধ, অনুষ্ঠান নাই। সরবারহও নেই, চাহিদাও নেই। সব মিলিয়ে দুধের বাজারে মন্দা পড়ছে। করোনাই আমাদের অন্ধকারে ফেলেছে। জানি না কি হবে সামনে। পেরেশানিতে আছি’।
যতটুকু দুধ এখন আড়তে আসে তা কিভাবে বিক্রি হয় জানতে চাইলে বিক্রেতা গোপাল ঘোষ বলেন, ‘পুরান ঢাকার বাসিন্দরাই কিনে নিয়ে যান। তারা খুচরা ক্রেতা। আগে খুচরা সেখানে ৭০-৭৫ টাকা কেজি ছিল এখন ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে’। ‘মিষ্টির দোকান সব বন্ধ হওয়ার কারণে বড় ক্রেতা এখন আসছে না’, বলেন তিনি।
বিকালের দিকে চার লিটার দুধ কিনতে আসেন নবাবপুরের বাসিন্দা আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘রথখোলার দুধে ভেজাল নেই। সেজন্য প্রতিদিন আমার বাসার জন্য চার লিটার দুধ নিয়ে যাই। দুধ বিক্রি কম বলে এখন কিছুটা কম দামে কিনতে পারছি’।